বনী কিনানার মুখদিজী নামক এক ব্যক্তিকে আনসার গোত্রের আবূ মুহাম্মাদ নামক এক লোক বলল যে, বিতরের নামায ওয়াজেব। এ কথা শুনে সাহাবী উবাদাহ্ বিন সামেত (রাঃ) বললেন, ‘আবূ মুহাম্মাদ ভুল বলছে।’ আমি আল্লাহর রসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, “পাঁচ ওয়াক্ত নামায আল্লাহ বান্দাগণের উপর ফরয করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তা যথার্থরুপে আদায় করবে এবং তাতে গুরুত্ব দিয়ে তার কিছুও বিনষ্ট করবে না, সেই ব্যক্তির জন্য আল্লাহর এই প্রতিশ্রুতি আছে যে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যে ব্যক্তি তা আদায় করবে না, সে ব্যক্তির জন্য আল্লাহর কোন প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দেবেন, নচেৎ ইচ্ছা হলে জান্নাতেও দিতে পারেন।” (মালেক, মুঅত্তা, আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে হিব্বান, সহীহ, সহিহ তারগিব ৩৬৩ নং)
মহানবী (সাঃ) সওয়ারীর উপর বিতরের নামায পড়েছেন। (বুখারী, মুসলিম, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্) দারাক্বুত্বনী, সুনান ১৬১৭নং) অথচ ফরয নামাযের সময় তিনি সওয়ারী থেকে নেমে কিবলামুখ করতেন। (আহমাদ, মুসনাদ, বুখারী)
বিতরের সময়
বিতরের সময় এশার পর থেকে নিয়ে ফজরের আগে পর্যন্ত। মহানবী (সাঃ) বলেন, “আল্লাহ তোমাদেরকে একটি অতিরিক্ত নামায প্রদান করেছেন। আর তা হল বিতরের নামায সুতরাং তোমরা তা এশা ও ফজরের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ে নাও।” (আহমাদ, মুসনাদ, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১০৮নং)
সাহাবী গুযাইফ বিনহারেস বলেন, একদা আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, ‘--- নবী (সাঃ) বিতরের নামায প্রথম রাত্রিতে পড়তেন, নাকি শেষ রাত্রিতে?’ তিনি বললেন, ‘কখনো তিনি প্রথম রাত্রিতে বিত্র পড়তেন, আবার কখনো শেষ রাত্রিতে।’ আমি বললাম, ‘আল্লাহু আকবার! সেই আল্লাহর প্রশংসা যিনি (দ্বীনের) ব্যাপারে প্রশস্ততা রেখেছেন।---’ (মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান ২০৯, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ১২৬৩নং)
অবশ্য যে ব্যক্তি মনে করে যে, সে শেষ রাত্রে উঠতে পারবে না, তার জন্য উত্তম হল প্রথম রাত্রে বিত্র পড়ে ঘুমানো। পক্ষান্তরে যে মনে করে যে, সে শেষ রাত্রে উঠতে পারবে তার জন্য উত্তম হল শেষ রাত্রে বিত্র পড়া।
মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, সে শেষ রাত্রে উঠতে পারবে না, তার জন্য উত্তম হল প্রথম রাত্রে বিত্র পড়ে নেওয়া। পক্ষান্তরে যে ধারণা করে যে, সে শেষ রাত্রে উঠতে পারবে তার জন্য উত্তম হল শেষ রাত্রে বিত্র পড়া। কারণ, শেষ রাতের নামাযে ফিরিশ্তা উপস্থিত হন এবং এটাই হল শ্রেষ্ঠতম।” (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ১২৬০নং)
একদা তিনি হযরত আবূ বাক্র (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কখন বিত্র পড়?” আবূ বাক্র (রাঃ) বললেন, ‘প্রথম রাত্রে এশার পরে।’ অতঃপর তিনি হযরত উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, “আর উমার তুমি?” উমার (রাঃ) বললেন, ‘শেষ রাতে।’ পরিশেষে তিনি বললেন, “কিন্তু তুমি হে আবূ বাক্র! স্থির-নিশ্চয়তা অবলম্বন করে থাক। আর তুমি হে উমার! (শেষ রাতে উঠার পূর্ণ) আত্মবিশ্বাস গ্রহণ করে থাক।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক)
শেষ জীবনে মহানবী (সাঃ) শেষ রাতেই বিত্র পড়তেন। কেননা, সেটাই ছিল উত্তম। এতদসত্ত্বেও তিনি তাঁর একাধিক সাহাবীকে স্থির-নিশ্চয়তা অবলম্বন পূর্বক প্রথম রাত্রে বিত্র পড়ে নিতে বিশেষ উপদেশ দিতেন। যেমন উপদেশ দিয়েছিলেন হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ)-কে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১২৬২নং) হযরত সা’দ বিন আবী অক্কাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর মসজিদে এশার নামায পড়ে এক রাকআত বিত্র পড়ে নিতেন। তাঁকে বলা হল, ‘আপনি কেবল এক রাকআত বিত্র পড়েন, তার বেশী পড়েন না (কি ব্যাপার)?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি আল্লাহর রসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি বিত্র না পড়ে ঘুমায় না, সে হল স্থির-নিশ্চিত মানুষ।” (আহমাদ, মুসনাদ)
বিত্র নামাযের রাকআত সংখ্যা
• বিত্র নামায একটানা এক সালামে ৯, ৭, ৫, ৩ রাকআত পড়া যায়।
৯ রাকআত বিতরের নিয়ম হল, ৮ রাকআত একটানা পড়ে তাশাহ্হুদে বসতে হবে। তাতে আত্-তাহিয়্যাত ও দরুদ-দুআ পড়ে সালাম না ফিরে উঠে গিয়ে আরো এক রাকআত পড়ে সালাম ফিরতে হবে। (মুসলিম, মিশকাত ১২৫৭নং)
৭ রাকআত বিতরের নিয়ম হল, ৬ রাকআত একটানা পড়ে তাশাহ্হুদে বসতে হবে। তাতে আত্-তাহিয়্যাত ও দরুদ-দুআ পড়ে সালাম না ফিরে উঠে গিয়ে আরো এক রাকআত পড়ে সালাম ফিরতে হবে। (সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্), আবূদাঊদ, সুনান ১৩৪২, নাসাঈ, সুনান ১৭১৯নং)
কোন কোন বর্ণনা মতে ষষ্ঠ রাকআতে না বসে একটানা ৭ রাকআত পড়ে সর্বশেষে তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফিরতে হবে। (নাসাঈ, সুনান ১৭১৮নং)
৫ রাকআত বিতরের নিয়ম হল, ৫ রাকআত একটানা পড়ে তাশাহ্হুদে বসতে হবে। তাতে আত্-তাহিয়্যাত ও দরুদ-দুআ পড়ে সালাম ফিরতে হবে। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, সুনান ১৭১৭, মিশকাত ১২৫৬নং)
৩ রাকআত বিতরের নিয়ম হল দুই প্রকার:
(ক) ২ রাকআত পড়ে সালাম ফিরে দিতে হবে। অতঃপর উঠে পুনরায় নতুন করে আরো এক রাকআত পড়ে সালাম ফিরতে হবে। (ইবনে আবী শাইবা, ইর: ২/১৫০) ইবনে উমারও এইভাবে বিত্র পড়তেন। (বুখারী)
(খ) ৩ রাকআত একটানা পড়ে তাশাহ্হুদে বসতে হবে। তাতে আত্-তাহিয়্যাত ও দরুদ-দুআ পড়ে সালাম ফিরতে হবে। (হাকেম, মুস্তাদরাক ১/৩০৪, বায়হাকী ৩/২৮, ৩/৩১) এ ক্ষেত্রে মাগরেবের নামাযের মত মাঝে (২ রাকআত পড়ে) আত্-তাহিয়্যাত পড়া যাবে না। যেহেতু আল্লাহর রসূল (সাঃ) বিতরকে মাগরেবের মত পড়তে নিষেধ করেছেন। (ইবনে হিব্বান, সহীহ ২৪২০,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/৩০৪, বায়হাকী ৩/৩১, দারাক্বুত্বনী, সুনান ১৬৩৪নং)
এতদ্ব্যতীত ৩ রাকআত বিত্র মাগরেবের মত করে পড়া, (দারাক্বুত্বনী, সুনান ১৬৩৭নং) নতুন করে তাহ্রীমার তকবীর দেওয়ার মত (উল্টা) তকবীর দিয়ে পুনরায় হাত বেঁধে কুনূত পড়া ইত্যাদি কিছু সলফ কর্তৃক বর্ণনা করা হলেও তা সহীহ নয়। (ইর: ৪২৭নং, তুহ্ফাতুল আহওয়াযী ১/৪৬৪) অতএব তা বিদআত ও পরিত্যাজ্য।
১ রাকআত বিত্র :
বিত্র এক রাকআতও পড়া যায়। খোদ মহানবী (সাঃ) এক রাকআত বিত্র পড়তেন। তিনি বলেন, “রাতের নামায দু রাকআত দু রাকআত। অতঃপর তোমাদের কেউ যখন ফজর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করে তখন সে যেন এক রাকআত বিত্র পড়ে নেয়।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১২৫৪নং)
তিনি আরো বলেন, “বিত্র হল শেষ রাতে এক রাকআত।” (মুসলিম, মিশকাত ১২৫৫নং)
তিনি বলেন, “বিত্র হল প্রত্যেক মুসলিমের জন্য হ্ক বা সত্য। সুতরাং যে ৫ রাকআত বিত্র পড়তে পছন্দ করে সে তাই পড়ুক, যে ৩ রাকআত পড়তে পছন্দ করে সে তাই পড়ুক এবং যে এক রাকআত পড়তে পছন্দ করে সে তাই পড়ুক।” (আবূদাঊদ, সুনান ১৪২২, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ১২৬৫নং)
ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে বলা হল যে, মুআবিয়া (রাঃ) এশার পরে এক রাকআত বিত্র পড়লেন (সেটা কি ঠিক)? উত্তরে তিনি বললেন, ‘তিনি ঠিকই করেছেন। তিনি তো ফকীহ্। তাঁকে নিজের অবস্থায় ছেড়ে দাও, তিনি নবী (সাঃ)-এর সাহাবী।’ (বুখারী, মিশকাত ১২৭৭নং)
এ ছাড়া আরো অন্যান্য বহু সলফ ১ রাকআত বিত্র পড়তেন। (ইবনে আবী শাইবা দ্র:)
বিত্র নামাযের মুস্তাহাব ক্বিরাআত
এ নামাযে সূরা ফাতিহার পর যে কোন সূরা পড়া যায়। তবে মুস্তাহাব হল, প্রথম রাকআতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকআতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকআতে সূরা ইখলাস পড়া। (আহমাদ, মুসনাদ, নাসাঈ, সুনান, দারেমী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, মিশকাত ১২৭০-১২৭২নং)
মহানবী (সাঃ) কখনো কখনো তৃতীয় রাকআতে সূরা ইখলাসের সাথে সূরা নাস ও ফালাকও পাঠ করতেন। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/৩০৫)
বিতরের কুনূত :
মহানবী (সাঃ) হযরত হাসান বিন আলী (রাঃ)-কে নিম্নের দুআ বিত্র নামাযে ক্বিরাআত শেষ করার পর (রুকূর আগে) পড়তে শিখিয়েছিলেন:-
اَللّهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِيْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِيْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ فَإِنَّكَ تَقْضِيْ وَلاَ يُقْضى عَلَيْكَ إِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ لاَ مَنْجَا مِنْكَ إِلاَّ إِلَيْكَ (وَصَلَّى اللهُ عَلى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ)।
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাহ্দিনী ফী মানহাদাইত। অআ-ফিনী ফীমান আ ফাইত। অতাওয়াল্লানী ফী মান তাওয়াল্লাইত। অবা-রিকলী ফী মা আ’ত্বাইত। অকি¸নী শার্রামা ক্বাযাইত। ফাইন্নাকা তাক্বয্ব অলা ইউক্বযা আলাইক। ইন্নাহু লা য়্যাযিল্লু মাঁ উওয়া-লাইত। অলা য়্যাইযযু মান আ’-দাইত। তাবা-রাকতা রাব্বানা অতাআ’-লাইত। লা মানজা মিনকা ইল্লা ইলাইক। (অ স্বাল্লাল্লাহু আলা নাবিয়িনা মুহাম্মাদ।)
اَللّهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِيْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِيْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ فَإِنَّكَ تَقْضِيْ وَلاَ يُقْضى عَلَيْكَ إِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ لاَ مَنْجَا مِنْكَ إِلاَّ إِلَيْكَ (وَصَلَّى اللهُ عَلى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ)।
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাহ্দিনী ফী মানহাদাইত। অআ-ফিনী ফীমান আ ফাইত। অতাওয়াল্লানী ফী মান তাওয়াল্লাইত। অবা-রিকলী ফী মা আ’ত্বাইত। অকি¸নী শার্রামা ক্বাযাইত। ফাইন্নাকা তাক্বয্ব অলা ইউক্বযা আলাইক। ইন্নাহু লা য়্যাযিল্লু মাঁ উওয়া-লাইত। অলা য়্যাইযযু মান আ’-দাইত। তাবা-রাকতা রাব্বানা অতাআ’-লাইত। লা মানজা মিনকা ইল্লা ইলাইক। (অ স্বাল্লাল্লাহু আলা নাবিয়িনা মুহাম্মাদ।)
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হেদায়াত করে তাদের দলভুক্ত কর যাদেরকে তুমি হেদায়াত করেছ। আমাকে নিরাপদে রেখে তাদের দলভুক্ত কর যাদেরকে তুমি নিরাপদে রেখেছ, আমার সকল কাজের তত্তাবধান করে আমাকে তাদের দলভুক্ত কর যাদের তুমি তত্তাবধান করেছ। তুমি আমাকে যা কিছু দান করেছ তাতে বরকত দাও। আমার ভাগ্য তুমি যা ফায়সালা করেছ তার মন্দ থেকে রক্ষা কর। কারণ তুমিই ফায়সালা করে থাক এবং তোমার উপর কারো ফায়সালা চলে না। নিশ্চয় তুমি যাকে ভালোবাস সে লাঞ্জিত হয় না এবং যাকে মন্দ বাস সে সম্মানিত হয় না। তুমি বরকতময় হে আমাদের প্রভু এবং তুমি সুমহান। তোমার আযাব থেকে তুমি ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল নেই। আর আমাদের নবীর উপর আল্লাহ রহ্মত বর্ষণ করেন। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ, বায়হাকী, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ১২৭৩নং, ইর: ২/১৭২)
প্রকাশ থাকে যে, দুআর শেষে দরুদের উল্লেখ উক্ত হাদীস সমূহে না থাকলেও সলফদের আমল শেষে দরুদ পড়ার কথা সমর্থন করে। আর সে জন্যই দুআর শেষে এখানে যুক্ত করা হয়েছে। (তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ২৪৩পৃ:, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী)
হযরত আলী (রাঃ) বলেন মহানবী (সাঃ) তাঁর বিতরের শেষ (রাকআতের রুকূর আগে কুনূতে) এই দুআ বলতেন,
اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوْبَتِكَ وَ أَعُوْذُ بِكَ مِنْكَ لاَ أُحْصِيْ ثَنَاءً عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلى نَفْسِكَ।
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিরিযা-কা মিন সাখাতিক, অবিমুআফা-তিকা মিন উক্ববাতিক, অ আঊযু বিকা মিন্কা লা উহ্সী ষানা-আন আলাইকা আন্তা কামা আসনাইতা আলা নাফসিক।
اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوْبَتِكَ وَ أَعُوْذُ بِكَ مِنْكَ لاَ أُحْصِيْ ثَنَاءً عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلى نَفْسِكَ।
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিরিযা-কা মিন সাখাতিক, অবিমুআফা-তিকা মিন উক্ববাতিক, অ আঊযু বিকা মিন্কা লা উহ্সী ষানা-আন আলাইকা আন্তা কামা আসনাইতা আলা নাফসিক।
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার সন্তুষ্টির অসীলায় তোমার ক্রোধ থেকে, তোমার ক্ষমাশীলতার অসীলায় তোমার শাস্তি থেকে এবং তোমার সত্তার অসীলায় তোমার আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি তোমার উপর তোমার প্রশংসা গুনে শেষ করতে পারি না, যেমন তুমি নিজের প্রশংসা নিজে করেছ। (সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্), মিশকাত ১২৭৬নং, ইর: ২/১৭৫)
প্রকাশ থাকে যে, অনেকে বলেছেন, উক্ত দু'আটি বিতরের নামাযের শেষে অর্থাৎ, সালাম ফিরার পর পড়া মুস্তাহাব। (আউনুল মা’বূদ ৪/২১৩, তুহ্ফাতুল আহওয়াযী ১০/৯, ফিকহুস সুন্নাহ্ আরবী ১/১৭৪, ফিকহুস সুন্নাহ্ উর্দু১৮৫পৃ: দ্র:)
পক্ষান্তরে মানারুস সাবীল (১/১০৮) আসসালসাবীল (১/১৬২) প্রভৃতি ফিকহের কিতাবে উক্ত দুআকে দুআয়ে কুনূত বলেই প্রথমোক্ত দুআর পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়েছে। আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্ প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থের পরিচ্ছেদের শিরোনাম বাঁধার ভাবধারায় বুঝা যায় যে, এ দুআ বিতরের কুনূতে পঠনীয়। নাসাঈ শরীফের উক্ত হাদীসের টীকায় আল্লামা সিন্ধী বলেন, ‘হতে পারে তিনি উক্ত দুআ কিয়ামের শেষাংশে (রুকূর আগে) বলতেন। সুতরাং ওটাও একটি দুআয়ে কুনূত; যেমন গ্রন্থকার (নাসাঈর) কথা দাবী করে। আবার এও হতে পারে যে, তিনি (বিতরের) তাশাহহুদের বৈঠকে (সালাম ফিরার পূর্বে) উক্ত দুআ পড়তেন। আর শব্দের বাহ্যিক অর্থও তাই।’ (নাসাঈ, সুনান ১৭৪৬নং, ২/২৭৫) অাল্লাহু আ’লাম।
বিতরের কুনূতকে কুনূতে গায়র নাযেলাহ্ বলা হয়। আর তা সব সময় প্রত্যেক রাত্রে বিত্র নামাযে পড়া হয়। অবশ্য কুনূতের দুআ পড়া মুস্তাহাব; জরুরী নয়। সুতরাং কেউ ভুলে ছেড়ে দিয়ে সিজদায় গেলে সহু সিজদা লাগে না। যেমন প্রত্যেক রাত্রে তা নিয়মিত না পড়ে মাঝে মাঝে ত্যাগ করা উচিত। (সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১৭৯পৃ:, আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২৭)
প্রকাশ থাকে যে, বিতরের কুনূত (দুআ) মুখস্থ না থাকলে তার বদলে তিনবার ‘ক্বুল’ বা ‘রাব্বানা আতেনা’ পড়ে কাজ চালানো শরীয়ত-সম্মত নয়। মুখস্থ না থাকলে করতে হবে। আর ততদিন কুনূত না পড়ে এমনিই কাজ চলবে।
বিতরের দুআয় ইমাম সাহেব বহুবচন শব্দ ব্যবহার করবেন। এরুপ করা বিধেয়। এটা নিষিদ্ধ নববী শব্দ পরিবর্তনের আওতাভুক্ত নয়। কারণ, এটা কেবলমাত্র শব্দের বচন পরিবর্তন। পক্ষান্তরে হাদীসের কোন কোন বর্ণনায় বিতরের দুআ বহুবচন শব্দেও বর্ণিত হয়েছে। (ত্বাবারানী, মু’জাম কাবীর ২৭০০নং, শারহুস সুন্নাহ্, বাগবী ৩/১২৯, সাতা: ইবনে বায ৪১পৃ:, মুখতাসারু মুখালাফাতু ত্বাহারাতি অসস্বালাহ, আব্দুল আযীয সাদহান ১৭১পৃ: দ্র:)
কুনূতের স্থান ও নিয়ম
কুনূতের দুআ (শেষ রাকআতের) রুকুর আগে বা পরে যে কোন স্থানে পড়া যায়। হুমাইদ বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, কুনূত রুকূর আগে না পরে? উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমরা রুকূর আগে ও পরে কুনূত পড়তাম।’ (ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ১২৯৪নং)
অনুরুপ (দুআর মত)হাত তোলা ও না তোলা উভয় প্রকার আমলই সলফ কর্তৃক বর্ণিত আছে। (তুহ্ফাতুল আহওয়াযী ১/৪৬৪)
অবশ্য দুআর পরে মুখে হাত বুলানো সুন্নত নয়। কারণ, এ ব্যাপারে যত হাদীস এসেছে সবগুলোই দুর্বল। (ইর: ২/১৮১, আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৫৫) বলা বাহুল্য, দুর্বল হাদীস দ্বারা কোন সুন্নত প্রমাণ করা সম্ভব নয়। তাই কিছু উলামা স্পষ্টভাবে তা (অনুরুপ বুকেহাত ফিরানোকে) বিদআত বলেছেন। (ইর: ২/১৮১, মু’জামুল বিদা’ ৩২২পৃ:)
ইযয বিন আব্দুস সালাম বলেন, ‘জাহেল ছাড়া এ কাজ অন্য কেউ করে না।’ পক্ষান্তরে দুআয় হাত তোলার ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীস এসেছে। তার মধ্যে কোন হাদীসেই মুখে হাত ফিরানোর কথা নেই। আর তা এ কথারই দলীল যে, উক্ত আমল আপত্তিকর ও অবিধেয়। (ইর: ২/১৮২, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১৭৮পৃ:)
বিতরের নামাযের সালাম ফিরে দুআ:
سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوْسِ،
উচ্চারণ: সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস।
উচ্চারণ: সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস।
অর্থ: আমি পবিত্রময় বাদশাহ্র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি।
এই দুআটি তিনবার পড়তে হয়। তন্মধ্যে তৃতীয় বারে উচ্চস্বরে পড়া কর্তব্য। (আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, মিশকাত ১২৭৪-১২৭৫নং)
এক রাতে দুইবার বিত্র নিষিদ্ধ
রাত্রের সর্বশেষ নামায হল বিতরের নামায। বিতরের পর আর কোন নামায নেই। অতএব যদি কেউ শেষ রাত্রে উঠতে পারবে না মনে করে এশার পর বিত্র পড়ে নেয় অতঃপর শেষ রাত্রে উঠতে সক্ষম হয়, সে তাহাজ্জুদ পড়বে কিন্তু আর দ্বিতীয় বার বিত্র পড়বে না। কারণ, মহানবী (সাঃ) বলেন, “এক রাতে দুটি বিত্র নেই।” (আহমাদ, মুসনাদ, আদ:, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে হিব্বান, সহীহ, বায়হাকী, জামে ৭৫৬৭নং) “তোমরা বিত্র নামাযকে রাতের শেষ নামায কর।” (বুখারী, মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান, ইর: ৪২২নং)
বিতরের পর নফল ২ রাকআত
অবশ্য এ ব্যাপারে একটি ব্যতিক্রম নামায হল, বিতরের পরে ২ রাকআত সুন্নত বসে বসে পড়া। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, রসূল (সাঃ) (বিত্র নামাযের) সালাম ফিরার পর বসে বসে ২ রাকআত নামায পড়তেন। (মুসলিম, সহীহ) হযরত উম্মে সালামাহ্ বলেন। ‘তিনি বিতরের পর বসে বসে (হাল্কা করে) ২ রাকআত নামায পড়তেন।’ (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ১২৮৪নং)
মহানবী (সাঃ) বলেন, “নিশ্চয় এই (সফর) রাত্রি জাগরণ ভারী ও কষ্টকর। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন বিত্র পড়বে তখন সে যেন ২ রাকআত পড়ে নেয়। অতঃপর সে যদি রাত্রে উঠতে পারে তো উত্তম। নচেৎ, ঐ ২ রাকআত তার (রাতের নামায) হয়ে যাবে।” (দারেমী, সুনান, মিশকাত ১২৮৬, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৯৯৩নং দ্র:)
উক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, ঐ ২ রাকআত আমাদেরও পড়া উচিত। আর তা মহানবী (সাঃ)-এর জন্য খাস নয়।
আবূ উমামাহ্ বলেন, ‘নবী (সাঃ) ঐ ২ রাকআত নামায বিতরের পর বসে বসে পড়তেন। আর তার প্রথম রাকআতে সূরা যিলযাল ও দ্বিতীয় রাকআতে সূরা কাফিরুন পাঠ করতেন।’ (আহমাদ, মুসনাদ, মিশকাত ১২৮৭নং)
বিতরের কাযা
বিত্র নামায যথা সময়ে না পড়া হলে তা কাযা পড়া বিধেয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি বিত্র না পড়ে ঘুমিয়ে যায় অথবা তা পড়তে ভুলে যায় সে ব্যক্তি যেন তা স্মরণ হওয়া মাত্র তা পড়ে নেয়।” (আহমাদ, মুসনাদ, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্),হাকেম, মুস্তাদরাক, জামে ৬৫৬২নং) তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি ঘুমিয়ে থেকে বিত্র না পড়তে পারে সে ব্যক্তি যেন ফজরের সময় তা পড়ে নেয়।” (তিরমিযী, সুনান, ইর: ৪২২, জামে ৬৫৬৩নং)
খোদ মহানবী (সাঃ)-এর কোন রাত্রে বিত্র না পড়ে ফজর হয়ে গেলে তখনই বিত্র পড়ে নিতেন। (আহমাদ, মুসনাদ ৬/২৪৩, বায়হাকী ১/৪৭৯, ত্বাবারানী, মু’জাম, মাজমাউয যাওয়াইদ,হাইষামী ২/২৪৬)
একদা এক ব্যক্তি মহানবীর দরবারে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর নবী! ফজর হয়ে গেছে অথচ আমি বিত্র পড়তে পারিনি।’ তিনি বললেন, “বিত্র তো রাত্রেই পড়তে হয়।” লোকটি পুনরায় বলল, ‘হে আল্লাহর নবী! ফজর হয়ে গেছে অথচ আমি বিত্র পড়তে পারিনি।’ এবারে তিনি বললেন, “এখন পড়ে নাও।” (ত্বাবারানী, মু’জাম, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৭১২নং)
এ হাদীস থেকে স্পষ্ট হয় যে, ফজর হয়ে গেলেও বিতর নামায বিতরের মতই কাযা পড়া যাবে। (সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৪/২৮৯ দ্র:)
বিত্র নামাযে জামাআত
মহানবী (সাঃ) যে কয় রাত তারাবীহ্র নামায পড়েছিলেন সে কয় রাতে জামাআত সহকারে বিত্র পড়েছিলেন। অনুরুপ সাহাবীগণও রমযান মাসে জামাআত সহকারে তারাবীহ্র সাথে বিত্র পড়েছেন।
পাঁচ-ওয়াক্ত নামাযে কুনূত
মুসলিমদের প্রতি কাফেরদের অত্যাচারের সময় পাঁচ-ওয়াক্ত নামাযের শেষ রাকআতের রুকূ থেকে মাথা তুলে কুনূত পড়া বিধেয়। (আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ১২৯০নং) এই কুনূতকে কুনূতে নাযেলাহ্ বলা হয়। এই কুনূতে মুসলিমদের জন্য দুআ এবং অত্যাচারী কাফেরদের বিরুদ্ধে বদ দু’আ করা বিধেয়। দুই হাত তুলে দুআ করবেন ইমাম এবং ‘আমীন-আমীন’ বলবে মুক্তাদীগণ। এই কুনূতের দুআর ভূমিকা নিম্নরুপ:-
اَللّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُثْنِيْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ كُلَّهُ، وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ، اَللّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّيْ وَ نَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعى وَنَحْفِدُ، نَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحَقٌ।
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা অ নাসতাগফিরুক, অনুষনী আলাইকাল খায়রা কুল্লাহ্, অনাশকুরুকা অলা নাকফরুক, অনাখলাউঅনাতরুকু মাঁই য়্যাফজুরুক, আল্লা-হুম্মা ইয়্যাকা না’বুদ, অলাকা নুসাল্লী অনাসজুদ, অইলাইকা নাসআ অ নাহ্ফিদ, নারজু রাহ্মাতাকা অনাখশা আযা-বাক, ইন্না আযা-বাকা বিল কুফফা-রি মুলহাক্ব।
اَللّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُثْنِيْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ كُلَّهُ، وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ، اَللّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّيْ وَ نَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعى وَنَحْفِدُ، نَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحَقٌ।
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা অ নাসতাগফিরুক, অনুষনী আলাইকাল খায়রা কুল্লাহ্, অনাশকুরুকা অলা নাকফরুক, অনাখলাউঅনাতরুকু মাঁই য়্যাফজুরুক, আল্লা-হুম্মা ইয়্যাকা না’বুদ, অলাকা নুসাল্লী অনাসজুদ, অইলাইকা নাসআ অ নাহ্ফিদ, নারজু রাহ্মাতাকা অনাখশা আযা-বাক, ইন্না আযা-বাকা বিল কুফফা-রি মুলহাক্ব।
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমরা তোমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি এবং ক্ষমা ভিক্ষা করছি, তোমার নিমিত্তে যাবতীয় কল্যাণের প্রশংসা করছি, তোমার কৃতজ্ঞতা করি ও কৃতঘ্নতা করি না, তোমার যে অবাধ্যতা করে তাকে আমরা ত্যাগ করি এবং তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই ইবাদত করি, তোমার জন্যই নামায পড়ি এবং সিজদা করি, তোমার দিকেই আমরা ছুটে যাই। তোমার রহ্মতের আশা রাখি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি, নিশ্চয় তোমার আযাব কাফেরদেরকে পৌঁছবে।
এরপর অত্যাচারিতদের জন্য দুআ এবং অত্যাচারীদের উপর বদদু’আ করতে হয়। যেমন,
اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ، وَأَلِّفْ بَيْنَ قُلُوْبِهِمْ، وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِهِمْ، وَانْصُرْهُمْ عَلَى عَدُوِّكَ وَعَدُوِّهِمْ،
اَللَّهُمَّ عَذِّبِ الْكَفَرَةَ الَّذِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِكَ، وَيُكَذِّبُوْنَ رُسُلَكَ، وَيُقَاتِلُوْنَ أَوْلِياَءَكَ، اَللَّهُمَّ خَالِفْ بَيْنَ كَلِمَتِهِمْ، وَزَلْزِلْ أَقْدَامَهُمْ، وَأَنْزِلْ بِهِمْ بَأْسَكَ الَّذِيْ لاَ تَرُدُّهُ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِيْنَ।
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাগফির লিল মু’মিনীনা অল মু’মিনা-ত, অলমুসলিমীনা অলমুসলিমাত, অ আল্লিফ বাইনা ক্বুলবিহিম, অ আসলিহ্ যা-তা বাইনিহিম, অনসুরহুম আলা আদুউবিকা অ আদুউবিহিম।
اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ، وَأَلِّفْ بَيْنَ قُلُوْبِهِمْ، وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِهِمْ، وَانْصُرْهُمْ عَلَى عَدُوِّكَ وَعَدُوِّهِمْ،
اَللَّهُمَّ عَذِّبِ الْكَفَرَةَ الَّذِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِكَ، وَيُكَذِّبُوْنَ رُسُلَكَ، وَيُقَاتِلُوْنَ أَوْلِياَءَكَ، اَللَّهُمَّ خَالِفْ بَيْنَ كَلِمَتِهِمْ، وَزَلْزِلْ أَقْدَامَهُمْ، وَأَنْزِلْ بِهِمْ بَأْسَكَ الَّذِيْ لاَ تَرُدُّهُ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِيْنَ।
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাগফির লিল মু’মিনীনা অল মু’মিনা-ত, অলমুসলিমীনা অলমুসলিমাত, অ আল্লিফ বাইনা ক্বুলবিহিম, অ আসলিহ্ যা-তা বাইনিহিম, অনসুরহুম আলা আদুউবিকা অ আদুউবিহিম।
আল্লা-হুম্মা আযযিবিল কাফারাতাল্লাযীনা য়্যাসুদ্দূনা আন সাবীলিক, অয়্যুকাযযিবূনা রুসুলাক, অয়্যুক্বা-তিলনা আউলিয়া-আক। আল্লাহুম্মা খা-লিফ বাইনা কালিমাতিহিম, অযালযিল আক্বদামাহুম, অআনযিল বিহিম বা’সাকাল্লাযী লা তারুদ্দুহু আনিল ক্বাউমিল মুজরিমীন।
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি মুমিন ও মুসলিম নারী-পুরুষদেরকে ক্ষমা করে দাও। তাদের হৃদয়ে হৃদয়ে মিল দাও। তাদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি কর। তাদেরকে তোমার ও তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর।
হে আল্লাহ! যে কাফেররা তোমার পথে বাধা সৃষ্টি করছে, তোমার রসূলদেরকে মিথ্যা মনে করছে এবং তোমার বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে তাদেরকে তুমি আযাব দাও। হে আল্লাহ! তুমি ওদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি কর। ওদেরকে বিক্ষিপ্ত ও বিচলিত কর এবং ওদের উপর তোমার সেই আযাব অবতীর্ণ কর, যা অপরাধী জাতি থেকে তুমি রদ করো না। (বাইহাকী, ২/২১১, ইবনে আবী শাইবাহ্ প্রমুখ, ইরওয়াউল গলীল ২/ ১৬৪- ১৭০)
রমযানের কুনূতে উক্ত দুআ, অর্থাৎ কাফেরদের উপর বদদুআ এবং মুমিনদের জন্য দুআ ও ইস্তেগফার করার কথা সাহাবীদের আমলে প্রমাণিত। (সহীহ ইবনে খুযাইমা ১১০০ নং)
যেমন এরুপ দুআও করা বিধেয়:-
اَللّهُمَّ أَنْجِ الْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْتَضْعَفِيْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ، اَللَّهُمَّ اشْدُدْ وَطْأَتَكَ عَلَى الطُّغَاةِ الظَّالِمِيْنَ، وَاجْعَلْهَا عَلَيْهِمْ سِنِيْنَ كَسِنِيْ يُوْسُف।
প্রকাশ থাকে যে, সাধারণ দিনসমূহে কেবল ফজরের নামাযে কুনূত বিধেয় নয়; বরং তা বিদআত। আবূ মালেক আশজাঈ বলেন, আমার আব্বা আল্লাহর রসূল (সাঃ)-এর পিছনে এবং আবূ বাক্র, উমার ও উসমানের পিছনে নামায পড়েছেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, তাঁরা কি ফজরে কুনূত পড়তেন? তিনি উত্তরে বললেন, ‘না, বেটা! এটা বিদআত।’ (আহমাদ, মুসনাদ, নাসাঈ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, বুলুগুল মারাম ৩০৩নং, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৭/৬৮)
اَللّهُمَّ أَنْجِ الْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْتَضْعَفِيْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ، اَللَّهُمَّ اشْدُدْ وَطْأَتَكَ عَلَى الطُّغَاةِ الظَّالِمِيْنَ، وَاجْعَلْهَا عَلَيْهِمْ سِنِيْنَ كَسِنِيْ يُوْسُف।
প্রকাশ থাকে যে, সাধারণ দিনসমূহে কেবল ফজরের নামাযে কুনূত বিধেয় নয়; বরং তা বিদআত। আবূ মালেক আশজাঈ বলেন, আমার আব্বা আল্লাহর রসূল (সাঃ)-এর পিছনে এবং আবূ বাক্র, উমার ও উসমানের পিছনে নামায পড়েছেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, তাঁরা কি ফজরে কুনূত পড়তেন? তিনি উত্তরে বললেন, ‘না, বেটা! এটা বিদআত।’ (আহমাদ, মুসনাদ, নাসাঈ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, বুলুগুল মারাম ৩০৩নং, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৭/৬৮)
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) কোন সম্প্রদায়ের জন্য দুআ অথবা বদদু’আ করা ছাড়া ফজরের নামাযে এমনি কুনূত পড়তেন না। (ইবনে হিব্বান, সহীহ, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, বুলুগুল মারাম ৩০২নং)
পক্ষান্তরে যে হাদীস দ্বারা ফজরের নামাযে কুনূত প্রমাণ করা হয়, তা হয় দুর্বল, না হয় সে কুনূত হল নাযেলার কুনূত; যা ৫ ওয়াক্ত নামাযেই বিধেয়। (তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ২৪৩পৃ:)
(বইঃ সালাতে মুবাশ্বির থেকে সংগৃহীত)
লেখক: শায়খ আব্দুল হামীদ আল ফাইযী আল-মাদানী
লিসান্স: মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদিআরব
(সৌদী আরবের আল-মাজমাআ অঞ্চলের দাওয়াত সেন্টারে কর্মরত দাওয়াত-কর্মী এবং বাংলা ভাষার প্রসিদ্ধ লেখক ও অনুবাদক।)
লেখক: শায়খ আব্দুল হামীদ আল ফাইযী আল-মাদানী
লিসান্স: মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদিআরব
(সৌদী আরবের আল-মাজমাআ অঞ্চলের দাওয়াত সেন্টারে কর্মরত দাওয়াত-কর্মী এবং বাংলা ভাষার প্রসিদ্ধ লেখক ও অনুবাদক।)