হিজরী বর্ষপঞ্জির নবম মাসের নাম ‘রামাযান’। রামাযান শব্দের অর্থ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়া। বিশিষ্ট অভিধানবিদ আল্লামা ফিরোযাবাদী এ মাসের নাম রামাযান হবার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। যেমন- (১) অত্যধিক গরমের সময় এ মাস পড়েছিল বলে, (২) এ মাসে ছিয়াম পালনকারীর পেটের জ্বালা বেশী হয় বলে, (৩) ছিয়াম দ্বারা পাপরাশি ভস্মীভূত হয় বলে।[1]
রামাযানের গুরুত্ব :
‘ছিয়াম’ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি।[2] ধনী-গরীব সকল প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের উপর রামাযান মাসে ছিয়াম পালন করা ফরয। একজন মানুষের সুন্দর ও স্বচ্ছভাবে জীবন যাপনের জন্য যে ধরনের বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার, ছিয়াম তার মধ্যে সে ধরনের গুণ-বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করে থাকে। এ মাসে বান্দার জন্য আল্লাহর রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করা হয় এবং বান্দার ইবাদতে বাধা প্রদানকারী শয়তানকে বেঁধে রাখা হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
إِذَا دَخَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ فُتِحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ- وَفِيْ رِوَايَةٍ: فُتِحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِيْنُ- وَفِيْ رِوَايَةٍ: فُتِحَتْ أَبْوَابُ الرَّحْمَةِ-
‘যখন রামাযান মাস আগমন করে তখন আসমানের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়। অন্য বর্ণনায় আছে, জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করা হয় এবং শয়তানদেরকে শৃঙ্খলিত করা হয়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রহমতের দ্বার সমূহ খুলে দেয়া হয়’।[3]
তিনি আরও বলেন,
إِذَا كَانَ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِّنْ شَهْرِ رَمَضَانَ صُفِّدَتِ الشَّيَاطِيْنُ وَمَرَدَةُ الْجِنِّ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ فَلَمْ يُفْتَحْ مِنْهَا بَابٌ وَفُتِحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ فَلَمْ يُغْلَقْ مِنْهَا بَابٌ وَيُنَادِيْ مُنَادٍ يَا بَاغِيَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ، وَلِلّهِ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ وَذَلِكَ كُلَّ لَيْلَةٍ-
‘যখন রামাযান মাসের প্রথম রাত্রি আসে, তখন শয়তান ও অবাধ্য জিনগুলোকে শৃঙ্খলিত করা হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়, অতঃপর উহার কোন দরজাই খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাসমূহ খোলা হয়, অতঃপর উহার কোন দরজাই আর বন্ধ করা হয় না। এ মাসে এক আহবানকারী আহবান করতে থাকেন, হে কল্যাণের অভিযাত্রীরা! অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের অভিসারীরা! বিরত হও। আল্লাহ তা‘আলা এই মাসে বহু ব্যক্তিকে জাহান্নাম হ’তে মুক্তি দেন। আর তা (মুক্তি দেয়া) প্রত্যেক রাত্রিতেই হয়ে থাকে’।[4]
‘ছিয়াম’ মানুষকে সকল প্রকার অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, الصِّيَامُ جُنَّةٌ ‘ছিয়াম ঢাল স্বরূপ’।[5] শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, والمراد أنه حجاب وحصن للصائم من المعاصى. ‘ঢাল দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল- ছিয়াম পাপাচার থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে ছায়েমের জন্য পর্দা ও রক্ষাকবচ’।[6] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যখন তোমাদের কারো ছিয়াম পালনের সময় হবে সে যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং ঝগড়া না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় কিংবা তার সাথে লড়াই করে, তাহ’লে সে যেন বলে, আমি ছায়েম’।[7]
মানুষের জন্য ছিয়াম পালনের গুরুত্ব রয়েছে বলেই আল্লাহ তা‘আলা উম্মতে মুহাম্মাদী সহ পূর্ববর্তী উম্মতের জন্যও তা ফরয করে দিয়েছিলেন। মহান আল্লাহ বলেছেন,يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ- ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা মুত্তাক্বী হ’তে পার’ (বাক্বারাহ ২/১৮৩)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ‘তোমাদের মধ্যে যে এ মাসকে পায় সে যেন ছিয়াম রাখে’ (বাক্বারাহ ২/১৮৫)।
রামাযানের ছিয়ামের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা প্রতি বছর মুসলমানদের ঈমানের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। এই পরীক্ষায় যখন মানুষ উত্তীর্ণ হয়, তখন তার মধ্যে আল্লাহকে ভয় করার ও যাবতীয় গোনাহ হ’তে বিরত থাকার যোগ্যতা অধিক পরিমাণে বেড়ে যায়। তখন সে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব কিছুই আল্লাহ জানেন ও দেখেন মনে করে গোপনেও আল্লাহর হুকুম অমান্য করতে পারে না। যে ব্যক্তি প্রকৃত ছিয়ামপালনকারী সে তীব্র গরমের সময় কলিজা ফেটে যেতে চাইলেও এক ফোটা পানি পান করে না। অসহ্য ক্ষুধার জ্বালায় শরীর দুর্বল হ’লেও সামান্য খাদ্য মুখে দেয় না। এত ত্যাগ, ধৈর্য স্বীকার করে ছিয়াম পালন করা একমাত্র আল্লাহর জন্যই হয়ে থাকে। তাই এর প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَإِنَّهُ لِيْ وَ أَنَا أَجْزِيْ بِهِ. ‘নিশ্চয়ই ছিয়াম আমার জন্য এবং আমি নিজেই তার প্রতিদান দিব’।[8]
এছাড়াও রামাযানের আরও কিছু গুরুত্ব পরিলক্ষিত হয়। যেমন-
১. সামগ্রিক কল্যাণ : ইসলামে ছিয়ামের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানসিক ও শারীরিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে ছিয়ামের প্রভাব অতিশয় কার্যকর । আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَأَنْ تَصُوْمُوْا خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْن- ‘আর তোমাদের ছিয়াম পালন করা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে’ (বাক্বারাহ ২/১৮৪)।
২. কুরআন নাযিলের মাস : পবিত্র কুরআন নাযিল হওয়ার কারণে এ মাসে ছিয়ামের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘রামাযান মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে আল-কুরআন। যা মানুষের হেদায়াত এবং সৎপথের সুস্পষ্ট নির্দেশ ও সত্য- মিথ্যার পার্থক্যকারী। সুতরাং যে ব্যক্তি রামাযান মাস পায় সে যেন ছিয়াম পালন করে’ (বাক্বারাহ ২/১৮৫)।
রামাযানের তাৎপর্য :
রামাযান শব্দের শাব্দিক অর্থ দহন বা দগ্ধকরণ। রামাযান মাস মুসলমানদের মাঝে তাদের সমস্ত পাপ মোচন করার জন্য আসে। কারণ মানব জীবনের দু’টি ধারা রয়েছে- সুপ্রবৃত্তি ও কুপ্রবৃত্তি। সুপ্রবৃত্তি আমাদের সমাজ জীবনে ঐক্য-সংহতি, প্রেম-মৈত্রী ও ভালবাসা সৃষ্টিতে সহায়তা করে। অপরদিকে কুপ্রবৃত্তি আমাদেরকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন, একক ও অসহায় করে তোলে। এভাবে ক্রোধ মানুষকে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে তোলে। লোভ, মোহ প্রভৃতি সামাজিক জীবনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। ফলে এগুলোর দহনের জন্যই এ দুনিয়ায় আল্লাহ রামাযানের প্রবর্তন করেছেন, যাতে এ দহনের ফলে মানুষ এ বিশ্বে তার প্রকৃত স্থান নির্দিষ্ট করতে পারে; সে যাতে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
কুরআনুল কারীমে ও ছহীহ হাদীছে এজন্যই ছিয়ামের এত মাহাত্ম্য ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ দৃষ্টিতেও এর ফযীলত ও কার্যকারিতার মর্ম উপলব্ধি করা যায়। এক্ষেত্রে ধনী ও নির্ধন এক সারিতে চলে আসে। সারা বৎসর যারা ধনীদের দ্বারে হাত পেতে কষ্টে দিনাতিপাত করেছে তারা যেমন ছিয়াম পালন করে, যারা নানাবিধ চর্বচোষ্য, লেহ্য ও পেয় খাদ্য-পানীয় দ্বারা রসনার তৃপ্তি সাধন করে, তারাও অন্ন ও সংস্থান থাকা সত্ত্বেও ছিয়াম পালন করে। এখানে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয় এটিই মানবতার মৌলিক ঐক্য।
এ মাসে কাম প্রবৃত্তির পরিচর্যা, লোভের বশীভূত হয়ে অন্যের জিনিসের প্রতি লোলুপ দৃষ্টিপাত, হিংসা-বিদ্বেষ বর্জনীয়। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে যেসব আবর্জনা আমাদের মানসে সঞ্চিত হয়ে তাকে আবিল করে তোলে, তা থেকে পবিত্রাণের মাধ্যম হচ্ছে এই ছিয়াম। ছিয়ামের অর্থ কেবল উপবাস থাকা নয়; বরং সকল প্রকার কামনা-বসনা, সুখ-সম্ভোগ ও পাপাচার থেকে বিরত থাকার নাম ছিয়াম।
আল্লাহ প্রদত্ত অফুরন্ত কল্যাণ লাভের ক্ষেত্রেও রামাযানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ دَخَلَ عَلَيْهِ رَمَضَانُ ثُمَّ انْسَلَخَ قَبْلَ أَنْ يُغْفَرَ لَهُ- ‘সেই ব্যক্তির নাক মাটিতে মিশে যাক, যে রামাযান পেল, অথচ নিজেকে ক্ষমা করে নিতে পারল না’।[9]
রামাযানের শিক্ষা
ভ্রাতৃত্ব : রামাযান আগমন করে আমাদের জীবনের পরিশুদ্ধির জন্য। এ মাস আমাদেরকে ধনী ও গরীবের মাঝে সমতা ও ভ্রাতৃত্ব শিক্ষা দেয়। আমরা সকলে যে একই আদমের সন্তান তা এ মাসে আমরা উপলদ্ধি করতে পারি। এ মাসে আমরা সকলে একই বিধান পালন করি এবং একে অপরের মধ্যেকার ভেদাভেদ ভুলে ভাই ভাই হয়ে যাই। The Cultural History of Islam গ্রন্থে বলা হয়েছে “The fasting of Islam has a wonderful teaching for establishing social unity, brotherhood and equity. It has also an excellant teaching for building a good moral character. ‘সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও সামাজিক ঐক্য প্রতিষ্ঠায় ইসলামের ছিয়ামে রয়েছে এক অভাবনীয় শিক্ষা। রয়েছে উত্তম নৈতিক চরিত্র গঠনের এক চমৎকার শিক্ষা’। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيْرًا وَّنِسَاءَ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِيْ تَسَاءَلُوْنَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا.
‘হে মানবমন্ডলী! তোমরা তোমাদের পতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হ’তে সৃষ্টি করেছেন ও তা হ’তে তদীয় সহধর্মিণী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের উভয় হ’তে বহু নর ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। আর সেই আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের যাঞ্ঝা করে থাক এবং আত্মীয়-জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয়ই আল্লাহই তোমাদের তত্ত্বাবধানকারী’ (নিসা ৪/১)।
সকল মানুষ এক আত্মা থেকে জন্ম নিয়েছে ফলে তারা একে অপরের ভাই ভাই এবং এই ভ্রাতৃত্বের বহিঃপ্রকাশের জন্য দীর্ঘ এক বছর পর আমাদের সামনে আগমন করে রামাযান মাস। এই মাসে হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সবাই ভ্রাতৃত্ব বজায় রেখে চলে এবং এক মনে ইবাদতে সময় ব্যয় করে।
আত্মসংযম : মানুষের মধ্যে পাপ প্রবণতা বা নিষিদ্ধ কর্মের দিকে ঝোঁক বেশী। আরবী প্রবাদ রয়েছে, اَلْإِنْسَانُ حَرِيْصٌ فِيْمَا مُنِعَ ‘মানুষ নিষিদ্ধ কাজের প্রতি বেশী আগ্রহী হয়’। আল্লাহকে ভয় করার মাধ্যমে ছিয়াম মানুষকে সম্পূর্ণরূপে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে প্রশিক্ষণ দেয়। কেননা ছায়েম ছিয়ামরত অবস্থায় কোন পাপ কাজে লিপ্ত হ’লে তার ছিয়ামের কোন মূল্য নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّوْرِ وَالْعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِيْ أَنْ يَّدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ.
‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও পাপাচার পরিহার করল না, তার পানাহার পরিহার করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই’।[10] আলী (রাঃ) বলেন, إن الصيام ليس من الطعام والشراب ولكن من الكذب والباطل واللغو. ‘খাদ্য-পানীয় থেকে বিরত থাকার নামই ছিয়াম নয়; বরং মিথ্যা, বাজে কাজ ও কথা থেকে বিরত থাকার নামই প্রকৃত ছিয়াম’।[11]
তাক্বওয়ার অনুশীলন : তাক্বওয়া লাভের জন্য ছিয়ামের কোন বিকল্প নেই। পাপাচার ও ভীতিপ্রদ বিষয় থেকে আত্মরক্ষা করার নাম তাক্বওয়া। রামাযান মাসে এই সকল পাপ থেকে নিজেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা সকল ছায়েম করে থাকে। ফলে এই মাসে ছিয়ামের মাধ্যমে তাক্বওয়ার অনুশীলন বেশী হয়।
প্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রণ : মানুষ স্বভাবতই তাক্বওয়াহীনতা ও গর্হিত কর্মে জড়িয়ে পড়ে। আর রামাযান এই সমস্ত প্রবৃত্তিমূলক কাজ-কর্ম থেকে ছায়েমকে মুক্ত রাখে। আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘(ক্বিয়ামতের দিন) ছিয়াম ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। ছিয়াম বলবে, হে প্রভু! আমি তাকে দিনে খাদ্য গ্রহণ ও সহবাস থেকে বিরত রেখেছি। কাজেই তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন! কুরআন বলবে, আমি তাকে রাত্রিতে ঘুমানো থেকে নিবৃত্ত করেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। তখন তাদের দু’জনেরই সুপারিশ গ্রহণ করা হবে’।১২ ফলে এই সমস্ত প্রবৃত্তিমূলক কাজ-কর্ম বর্জনের মাধ্যমে রামাযান মাসে প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন করা যায়।
পরিশেষে বলা যায়, পাপ-পংকিলতামুক্ত, আত্মনিয়ন্ত্রিত জীবন গঠনে ছিয়ামের কোন বিকল্প নেই। রামাযানের মাসব্যাপী ছিয়াম সাধনার মাধ্যমে প্রকৃত মুমিন তৈরী হ’লে সমাজ, দেশ, জাতি উপকৃত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্রগঠনে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন- আমীন!!
– ড. মুহাম্মাদ আলী
[1]. ক্বামূস, ২য় খন্ড, পৃঃ ৪৯০।