হিল্লা বিয়ে
ভূমিকা
হিল্লা : উপায়, গতি, ব্যবস্থা, আশ্রয় ও অবলম্বন বিভিন্ন অর্থে আভিধানিকভাবে ব্যবহার হয়। পরিভাষায় হিল্লা বলা হয় : ‘কোন স্বামীর তিন তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীকে এ শর্তে বিয়ে করা যে, বিয়ের পর সহবাস শেষে স্ত্রীকে তালাক দেবে, যেন সে পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হয়, সে তাকে পুনরায় বিয়ে করতে পারে’। এ বিয়ে বাতিল ও অশুদ্ধ, এর ফলে নারী তিন তালাকদাতা স্বামীর জন্য হালাল হয় না। ইমাম ইব্ন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন : এর উদাহরণ হচ্ছে, কোন ব্যক্তি যখন তার স্ত্রীকে তিন তালাক প্রদান করে, তখন স্ত্রী তার উপর হারাম হয়ে যায়, যতক্ষণ না স্ত্রী সে ব্যতীত অন্য স্বামীকে বিয়ে করে। যেমন আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করেছেন, যেরূপ এসেছে তার নবীর সুন্নতে এবং যার উপর সকল উম্মতের ঐক্যমত। যখন কোন ব্যক্তি এ নারীকে তালাক দেয়ার নিয়তে বিয়ে করে, যেন সে তার পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হয়, তখন এ বিয়ে হারাম ও বাতিল বলে গন্য। এভাবে বিয়ে করার পর তাকে রাখুক বা আলাদা করুক, অথবা আকদের সময় শর্ত করুক বা তার আগে শর্ত করুক, অথবা শাব্দিক কোন শর্ত ছাড়া উভয়ের মধ্যে শুধু প্রস্তাব আকারে ছিল, আর পুরুষ ও নারীর অবস্থা এবং মোহর ছিল শর্তের ন্যায়, অথবা এসব কিছুই ছিল না বরং পুরুষ ইচ্ছা করছে তাকে বিয়ে করবে, অতঃপর তাকে তালাক দেবে যেন তিন তালাকদাতার জন্য সে হালাল হয়, নারী ও তার অভিভাবকের সম্পূর্ণ অজান্তে, তিন তালাকদাতা জানুক বা না জানুক, সর্বাবস্থায় এ তালাক বাতিল হবে। যদিও হিল্লাকারী এ ধারণা করে যে, এটা একটা ভাল কাজ এবং তাকে তার স্বামীর নিকট ফিরিয়ে দিলে তাদের উপর বিরাট অনুগ্রহ হবে, কারণ তালাকের কারণে তাদের নিজেদের, তাদের সন্তানের ও তাদের দাম্পত্য জীবন ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বিসহ হয়েছে ইত্যাদি। ইসলামের দৃষ্টিতে এ বিয়ের কোন মূল্য নেই, এটা বিয়ে হিসেবে গণ্য হয় না, এ বিয়ের ফলে তিন তালাকদাতার তাকে বিয়ে করা বৈধ হবে না, যতক্ষণ না কোন ব্যক্তি তাকে চুক্তি, প্রতারণা ও লুকোচুরি ব্যতীত আগ্রহসহ বিয়ে করে, সহবাসে লিপ্ত হয়ে একে অপরের সাথে মেলামেশা করে, অতঃপর যখন তাদের মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি হয় মৃত্যুর কারণে, অথবা তালাক বা খোলা’ করার কারণে, তখনই শুধু প্রথম স্বামীর জন্য এ নারীকে বিয়ে করা বৈধ। আর যদি এ হিল্লাকারী তাকে তালাক না দিয়ে স্থায়ীভাবে রাখতে চায়, তাহলে নতুনভাবে আকদের মাধ্যমে বিয়ে করা জরুরী, কারণ পূর্বের আকদ ছিল বাতিল ও ফাসেদ, তা দ্বারা এ স্ত্রীর সাথে অবস্থান করা বৈধ নয়। এটাই কুরআন ও হাদিসের ভাষ্য। এটাই সাহাবায়ে কেরাম, সকল তাবেয়ি ও তাদের পরবর্তী আলেমদের অভিমত।
এতে সন্দেহ নেই, হিল্লা একটি গর্হিত, নিন্দিত ও বিকৃত রুচির কাজ, কিন্তু মূর্খ সমাজ ও বক ধার্মিক লোকেরা শিক্ষিত ব্যক্তিত্ব ও আলেমদের শরণাপন্ন হওয়া ব্যতীত এটাকে ইসলামের বিধান জেনে তালাক প্রাপ্তা নারীদের ক্ষেত্রে হিল্লার ন্যায় ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে চলছে, যার ফলে বিতর্কিত বরং কলুষিত হচ্ছে ইসলামের সুন্দর বিধান ও মহান আদর্শ। আর শত্রুরা এটাকে তাদের মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে, কুরআন ও ইসলামের কুৎসা রটনার ক্ষেত্রে তাদের কোন প্রচেষ্টার ত্রুটি রাখছে না, এটাকে তারা ফতোয়া হিসেবে প্রচার করে, ফতোয়া নিষিদ্ধের দাবিও তুলছে। তাই এ বিষয়ে ইসলামের মূল উৎস কুরআন ও হাদিস এবং ইসলামি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ফতোয়ার নিরিখে বিস্তারিত আলোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি। আশা করছি এর থেকে সব শ্রেণীর লোকেরাই বিশেষভাবে অবহিত ও উপকৃত হবেন। প্রথমে পাঠকবর্গের সামনে হিল্লা বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতক হাদিস, অতঃপর বিশিষ্ট আলেমদের ছয়টি ফতোয়া, অতঃপর তালাক সংক্রান্ত দু’টি আয়াতের অর্থ ও ব্যাখ্যা পেশ করব, ইনশাআল্লাহ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিল্লা থেকে নিষেধ করেছেন। এটা কতক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই লানত করেছেন হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়ের উপর। আবার কতক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহ তাআলা তাদের উভয়ের উপর লানত করেছেন, আবার কতক হাদিসে তিনি হিল্লাকারীকে ভাড়া করা পাঠার সাথে তুলনা করেছেন। এ বিষয়ে আমরা আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু, আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু, আলি রাদিআল্লাহু আনহু, উকবা ইব্ন আমের রাদিআল্লাহু আনহু, উবায়েদ ইব্ন উমায়ের রাদিআল্লাহু আনহু ও আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস রাদিআল্লাহু প্রমুখ থেকে বর্ণিত স্বতন্ত্র ছয়টি হাদিস, অতঃপর তাবেয়ি ও তাদের পরবর্তী মনীষীদের বাণী উল্লেখ করছি :
এক. ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস :
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ: " لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُحِلَّ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ ".قَالَ أَبُو عِيسَى: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.
ইব্ন মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে লানত করেছেন।” ইমাম তিরমিজি রাহিমাহুল্লাহ বলেন : এ হাদিসটি হাসান সহিহ। তিনি আরো বলেন : এ হাদিসটি একাধিক সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করা হয়েছে, এ হাদিস মোতাবেকই আহলে ইলমদের আমল, যেমন ওমর ইব্ন খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহু, উসমান ইব্ন আফ্ফান রাদিআল্লাহু আনহু ও আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর রাদিআল্লাহু আনহু প্রমূখ ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম। সাহাবাদের পরবর্তী যুগের ফুকাহায়ে কেরাম তথা তাবেয়িগণও এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ইমাম সুফিয়ান সাওরি রাহিমাহুল্লাহ, ইব্নুল মুবারক রাহিমাহুল্লাহ, শাফেয়ি রাহিমাহুল্লাহ, আহমদ ইব্ন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ ও ইসহাক রাহিমাহুল্লাহ প্রমূখদেরও অনুরূপ অভিমত। ইমাম তিরমিজি রাহিমাহুল্লাহ বলেন : আমি জারুদ ইব্ন ‘মুআজ’-কে ইমাম ‘ওয়াকি’ থেকে বর্ণনা করতে শোনেছি, তিনিও অনুরূপ বলেছেন, তিনি বলেছেন : এ হাদিসের ফলে যুক্তিবাদীদের কথা বাইরে নিক্ষেপ করা উচিত। ‘জারুদ’ বলেন : ‘ওয়াকি’ বলেছেন : আর সুফিয়ান রাহিমাহুল্লাহ বলেন : যদি কোন ব্যক্তি কোন নারীকে হিল্লা করার নিয়তে বিয়ে করে, অতঃপর তাকে স্থায়ীভাবে নিজের কাছেই রাখার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তার জন্য তাকে রাখা বৈধ হবে না, যতক্ষণ না তাকে নতুন করে বিয়ে করে”।
সূত্র : জামে তিরমিজি : (পৃ.৪২৫), হাদিস নং : (১০৩৪), প্রকাশক : দারু ইহ্ইয়াউত তুরাসিল আরাবি, বইরুত। এ হাদিসটি সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে আরো বর্ণনা করেন ইমাম আহমদ : (৪২৮৩), (৪২৮৪), (৪৪০৩), নাসায়ি ফি সুনানিল কুবরা : (৩/৩২৫) ইব্ন আবি শায়বাহ : (৭/২৯২), দারামি : (২২৫), বায়হাকি : (৭/৩৩৯) প্রমুখগণ।
হাফেজ ইব্ন হাজার আসকালানি রাহিমাহুল্লাহ উল্লেখ করেন, ইব্ন মাসউদ থেকে বর্ণিত এ হাদিসটি ইব্নুল কাত্তান ও ইব্ন দাকিকিল ঈদ বুখারির শর্ত মোতাবেক সহিহ ও বিশুদ্ধ বলেছেন। “তালখিস” : (৩/৩৭২),
আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ থেকে বর্ণিত এ হাদিসের আরো একটি সনদ উল্লেখ করেছেন ইমাম আহমদ : (৪৩০), শাশি : (২/২৮৬,৮৬২) আবু ইয়ালা : (৮/৫৬৮,৫০৫৪) বগভি ফি শারহিস সুন্নাহ : (৫/৭৮,২২) এবং ইসহাক ইব্ন রাহওয়েহ তার মুসনাদ গ্রন্থে। দেখুন : নসবুর রায়াহ লিয-যায়লায়ি : (৩/২৩৯), এ সনদের একজন বর্ণনাকারী আাবুল ওয়াসেল ‘মজহুল’ (অপরিচিত), তার কারণে এ সনদটি দুর্বল। দেখুন : আল-ইকমাল : (পৃ:৫৬১), হাফেজ ইব্ন হাজার ‘তাজিলিল মানফাআ’ (পৃ:৫২৭) গ্রন্থে এ সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছেন।
আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ থেকে বর্ণিত এ হাদিসের আরো একটি সনদ উল্লেখ করেছেন আব্দুর রাজ্জাক তার ‘মুসান্নাফ’ : (৬/২৬৭) গ্রন্থে। এ সনদের একজন বর্ণনাকারী ‘হারেস’ এর কারণে এ হাদিসটি দুর্বল। দেখুন : “আল-মাজমা” : (৪/১১) লিল হায়সামি।
দুই. ইমাম আহমদ ইব্ন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَال: " لَعَنَ َرسولُ اللَّهِ الْمُحِلَّ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ "
আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে লানত করেছেন”। আহমদ : (২/৩২৩), ইব্নুল জারুদ ফিল “মুনতাকা” : (৬৮৪), বায়হাকি ফি সুনানিল কুবরা : (৭/৩৩৯), ইব্ন আবি হাতেম ফিল ইলাল : (১/৪১৩) এবং তিরমিজি ফি ইলালিল কাবির : (২৭৩), ইমাম যায়লায়ি তার “নসবুর রায়াহ” (৩/২৪০) গ্রন্থে এ সনদে বিদ্যমান বর্ণনাকারীদের আলোচনা করে বলেন হাদিসটি সহিহ। “ইলালুল কাবির” : (১/১৬০) গ্রন্থে ইমাম তিরমিজির বর্ণনা মতে এ হাদিসটি ইমাম বুখারি হাসান বলেছেন। তার সূত্রে হাফেজ ইব্ন হাজার তার “তালখিস” (৩/৩৭৩) গ্রন্থে ইমাম বুখারির এ মন্তব্য উল্লেখ করেন।
তিন. ইমাম আবু দাউদ রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন :
عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " لَعَنَ اللَّهُ الْمُحَلِّلَ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ ".
আলি রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে আল্লাহ তাআলা লানত করেছেন”। আবু দাউদ : (পৃ.৫৭২), হাদিস নং : (১৭৮১), আহমদ : (৬৩৫), তিরমিজি : (১১১৯), ইব্ন মাজাহ : (১৯৩৫) ও ইব্নুল জাওযি ফিল ইলালিল মুতানাহিয়া : (২/৬৪৭), এ হাদিসের সনদ দুর্বল।
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ‘আউনুল মাবুদ’ এর লেখক বলেন : হিল্লাকারী (অর্থাৎ অপরের তিন তালাক প্রাপ্তা নারীকে এ নিয়তে বিবাহকারী যে, সহবাসের পর তাকে তালাক দিবে, যেন তিন তালাকদাতা তথা পূর্বের স্বামী তাকে পুনরায় বিয়ের মাধ্যমে হালাল করে নেয়) সম্পর্কে কেউ বলেছেন, যেহেতু সে হালাল করার ইচ্ছা করেছে, তাই তাকে হিল্লাকারী বলা হয়। হাফেজ ইব্ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ তার ‘তালখিস’ নামক গ্রন্থে বলেন : হাদিস বিশরাদগণ এর ভিত্তিতে দলিল দেন যে, যদি প্রথম স্বামী দ্বিতীয় স্বামীকে শর্ত করে বিয়ের পরই সে তার থেকে আলাদা হয়ে যাবে, অথবা শর্ত করে সে তাকে তালাক দেবে, অথবা এরকম অন্য কোন শর্ত করে, তাহলে বিয়ে শুদ্ধ হবে না। এ হাদিস থেকে এ অর্থই হাদিস বিশারদগণ গ্রহণ করেছেন। ইমাম হাকেম রহ. ও ইমাম তাবরানি রহ. তার ‘আওসাত’ গ্রন্থে ওমর ইব্ন নাফে থেকে বর্ণনা করেন, সে তার পিতা নাফে সূত্রে বলেন :
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى ابن عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، فَسَأَلَهُ عَنْ رَجُلٍ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ ثَلاثًا، فَتَزَوَّجَهَا أَخٌ لَهُ، مِنْ غَيْرِ مُؤَامَرَةٍ مِنْهُ، لِيُحِلَّهَا لأَخِيهِ، هَلْ تَحِلُّ لِلأَوَّلِ؟ قَالَ: " لا، إلا نْكَاحُ رَغْبَةٌ، كُنَّا نَعُدُّ هَذَا سِفَاحًا عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ ".هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ
জনৈক ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইব্ন ওমর রাদিআল্লাহু আনহুর নিকট আগমন করে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, যে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে, অতঃপর তার এক ভাই কোন পরামর্শ ছাড়াই তালাক প্রাপ্তা নারীকে বিয়ে করে তার ভাইয়ের জন্য হালাল করার নিয়তে, এভাবে কি প্রথম স্বামীর জন্য স্ত্রী হালাল হবে ? তিনি বললেন : না, পছন্দ ও আগ্রহের বিয়ে ব্যতীত হালাল হবে না, আমরা এটাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে যেনা বিবেচনা করতাম। আল-মুসতাদরাক লিল হাকেম : হাদিস নং : (২৭৩১) ইমাম খাত্তাবি রাহিমাহুল্লাহ ‘মাআলেম’ গ্রন্থে বলেন : {যদি এ বিয়ে সম্পাদিত হয় উভয়ের শর্ত মোতাবেক, তাহলে এ বিয়েই বাতিল, কারণ নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে এ চুক্তি শেষ হয়ে যাবে ‘মুতআ’ বিয়ের ন্যায়, আর যদি শর্ত না হয়, বরং নিয়ত ও বিশ্বাস থাকে অনুরূপ, তাহলে এটা মাকরুহ, যদি দ্বিতীয় স্বামী তার সাথে সহবাস করে অতঃপর তালাক দেয় এবং ইদ্দত শেষ হয়, তাহলে সে প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হল। তবে উভয়ের হিল্লার ইচ্ছা গোপন রাখা অথবা হিল্লার নিয়ত করা অথবা কোন একজনের হিল্লার ইচ্ছা করা অনেক আলেমই হারাম বলেছেন, যদিও উভয়ে এর কোন শর্ত না করে। ইবরাহিম নখয়ি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন : ‘পছন্দ ও আগ্রহের বিয়ে ব্যতীত প্রথম স্বামীর জন্য তিন তালাক প্রাপ্তা নারী হালাল হবে না, যদি তিন ব্যক্তির কেউ প্রথম স্বামী অথবা দ্বিতীয় স্বামী অথবা নারী হিল্লার নিয়ত করে, তাহলে বিয়ে বাতিল, প্রথম স্বামীর জন্য নারী হালাল হবে না’। সুফিয়ান সাউরি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন : ‘যদি কোন ব্যক্তি হিল্লার নিয়তে বিয়ে করে, অতঃপর তাকে রাখার ইচ্ছা করে, তাহলে এটা আমার নিকট পছন্দনীয় নয়, যতক্ষণ না তাকে নতুনভাবে বিয়ে করে’। ইমাম আহমদ ইব্ন হাম্বলও অনুরূপ বলেছেন। মালেক ইব্ন আনাস রাহিমাহুল্লাহ বলেন : যে কোন অবস্থায় হোক উভয়ের মাঝে পৃথক করে দেয়া হবে।} খাত্তাবির কথা এখানেই শেষ। উভয়ে অভিশপ্ত এ জন্য যে, হিল্লাতে রুচি বোধ ও সম্মানের বিলুপ্তি ঘটে, আত্মমর্যাদা বিনষ্ট হয় এবং নিকৃষ্ট প্রকৃতি ও ইতর স্বভাব স্পষ্ট হয়, যার জন্য হিল্লা করা হয়, তার ব্যাপারে তো এসব স্পষ্ট, আর হিল্লাকারী এ জন্য যে, সে অপরের উদ্দেশ্য নিজেকে সহবাসের জন্য ভাড়া দেয়, কারণ যার জন্য হিল্লা করা হচ্ছে, তার সহবাসের উপযুক্ত করার জন্যই সে নারীর সাথে সহবাস করে। এ জন্যই তাকে ভাড়া করা পাঠার সাথে তুলনা করা হয়েছে। কাদি আয়াদ সূত্রে মিরাকাতের লেখক এ উক্তি বর্ণনা করেছেন। ‘আউনুল মাবুদ’ হাদিস নং : (১৭৩৬), সংক্ষিপ্ত অনুবাদ।
চার. ইমাম হাকেম তার মুসতাদরাক গ্রন্থে সাহাবি উকবা বিন আমের রাদিআল্লাহু থেকে বর্ণনা করেন:
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ: " أَلا أُخْبِرُكُمْ بِالتَّيْسِ الْمُسْتَعَارِ؟ "، قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: " هُوَ الْمُحِللُّ "، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ: " لَعَنَ اللَّهُ الْمُحِللَّ، وَالْمُحَلَّلَ لَهُ " هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الإِسْنَادِ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ، ووافقه الذهبي.
উকবা ইব্ন আমের রাদিআল্লাহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “আমি কি তোমাদেরকে ভাড়া করা পাঠা সম্পর্কে বলব ?” তারা বলল : অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল, তিনি বললেন : “হিল্লাকারী”, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : “আল্লাহ হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে অভিসম্পাত করেছেন”। হাকেম বলেন, এ হাদিসের সনদ সহিহ, কিন্তু বুখারি ও মুসলিম তা উল্লেখ করেননি। ইমাম যাহাবি রাহিমাহুল্লাহ তার সমর্থন করেছেন। আল-মুসতাদরাক লিল হাকেম : (পৃ.১০২৮), হাদিস নং : (২৭৩১), ইব্ন মাজাহ : (১৯৩৬), দারাকুতনি : (৩৫৭৬), বায়হাকি : (৭/৩৩৯), হাদিস নং : (১৪১৮৭), ইব্নুল জাওজি ফিল ইলালিল মুতানাহিয়াহ : (২/৬৪৬)
পাঁচ. উমার ইব্ন উবায়েদ নিজ পিতা -যিনি ছিলেন একজন সাহাবি- থেকে বর্ণনা করেন :
عن عبيد بن عميرقال : لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم المحلل والمحلل له والمتشبهين من الرجال بالنساء والمتشبهات من النساء بالرجال.
“হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় এবং যে সকল পুরুষরা নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে ও যে সকল নারীরা পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে তাদের সবাইকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন”। ইব্ন কানে ফি “মুজামিস সাহাবাহ” : (২/২২৯), এ সনদটি দুর্বল, দেখুন : “তালখিস” : (৩/৩৭৩) লি ইব্ন হাজার আসকালানি রহ.।
ছয়. ইব্ন মাজাহ রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন :
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: " لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُحَلِّلَ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ "
ইব্ন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয়, উভয়কে লানত করেছেন”। ইব্ন মাজাহ : (১৯৩৪), হাফেজ ইব্ন হাজার তার “তালখিস” : (৩/৩৭২) গ্রন্থ ও বুআইসিরি তার “জাওয়ায়েদ” : (২/১১২) গ্রন্থে এ সনদটি দুর্বল বলেছেন।
এ ছাড়াও এ হাদিসটি আরো বিভিন্ন সূত্রে অনেকে বর্ণনা করেছেন, যেমন ইব্ন মাজাহ : (১৯৩৫) ইব্ন আউন রা. সূত্রে, বায়হাকি তার সুনানুল কুবরা : (১৪১৮৩) গ্রন্থে কাতাদা রা. সূত্রে, ইমাম আহমদ : (৮৪৪), (১২৮) জাবের রা. সূত্রে ইত্যাদি।
হিল্লা হারাম সম্পর্কে সাহাবাদের ঐক্যমত :
ইব্ন তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ (إقامة الدليل على إبطال التحليل) গ্রন্থে এ বিষয়ে সাহাবাদের ঐক্যমত উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন : কুবাইসা ইব্ন জাবের ওমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন :
والله لا أوتى بمحلٍّ ومحلَّل له إلا رجمتهما .
“হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয়, তাদেরকে আমার সামনে পেশ করা হলে আমি উভয়কে প্রস্তরাঘাত করব”। তার এ বাণী বর্ণনা করেছেন আবু বকর ইব্ন আবি শায়বাহ, আবু ইসহাক জাওজাজানি, হারবুল কারমানি ও আবু বকর আল-আসরম প্রমুখগণ। তার এ বাণী প্রসিদ্ধ ও বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত। ‘জায়েদ’ ইব্ন আয়াদ ইব্ন জাদ থেকে বর্ণিত, তিনি নাফে রহ.-কে বলতে শোনেছেন, এক ব্যক্তি ইব্ন ওমরকে হিল্লাকারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তাকে ইব্ন ওমর বলেন :
عرفت ابن الخطاب رضي الله عنه لو رأى شيئا من ذلك لرجم فيه.
“আমি জানি যে, এ ধরনের কোন ঘটনা ইব্ন খাত্তাব দেখলে তিনি তাতে প্রস্তরাঘাত করতেন”। ইব্ন ওহাব জায়েদ সূত্রে এ বাণী বর্ণনা করেন, জায়েদকে অনেকে দুর্বল বলেছেন, তাই এ সনদটি দুর্বল। তবে সে ছাড়াও বিভিন্ন সূত্রে এ বাণী বর্ণিত হয়েছে। সুলাইমান ইব্ন ইয়াসার থেকে বর্ণিত,
رفع إلى عثمان رضي الله عنه رجل تزوج امرأة ليحلها لزوجها ففرق بينهما وقال لا ترجع إليه إلا بنكاح رغبة غير دلسة.
“এক ব্যক্তিকে উসমান রাদিআল্লাহু আনহুর দরবারে পেশ করা হয়, যে এক নারীকে বিয়ে করেছিল, তার পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল করার জন্য, তিনি তাদের মাঝে পৃথক করে দেন এবং বলেন, লুকাচুরি ও প্রতারণাহীন আগ্রহের বিয়ে ব্যতীত সে তার পূর্বের স্বামীর কাছে ফিরে যেতে পারবে না”। এ হাদিসটি বর্ণনা করেন জাওজাজানি। আবু মারজুক আত-তাজিবি থেকে বর্ণিত,
أن رجلا أتى عثمان فقال إن جاري طلق امرأته في غضبه ولقي شدة فأردت أن أحتسب نفسي ومالي فأتزوجها ثم أبني بها ثم أطلقها فترجع إلى زوجها الأول فقال له عثمان لا تنكحها إلا نكاح رغبة.
“এক ব্যক্তি উসমানের নিকট এসে বলে, আমার প্রতিবেশী তার স্ত্রীকে গোস্বায় তালাক দিয়েছে, এখন সে খুব বিপদের সম্মুখীন, আমার ইচ্ছা আমার জান ও সম্পদ দ্বারা আমি তাকে উপকার করি, আমি নারীকে বিয়ে করি অতঃপর সহবাসে মিলিত হই অতঃপর তাকে তালাক দেই, যেন সে তার প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যেতে পারে, উসমান তাকে বললেন, আগ্রহ বত্যীত তুমি তাকে বিয়ে করবে না”। এ হাদিস বর্ণনা করেছেন আবু ইসহাক সিরাজি তার মুহাজ্জাব গ্রন্থে। ইব্ন ওহাব আব্দুর রহমান মুরাদি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আবু মারওয়ান তাজিবিকে বলতে শোনেছেন :
إن رجلا طلق امرأته ثلاثا ندما وكان له جار فأراد أن يحلل بينهما بغير علمهما فسأل عن ذلك عثمان فقال له عثمان إلا نكاح رغبة غير مدالسة.
“এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে লজ্জিত হয়, তার এক প্রতিবেশী ছিল, যে তাদের অজান্তে উভয়ের মাঝে হিল্লা করার ইচ্ছা করে, এ সম্পর্কে তিনি উসমানকে জিজ্ঞাসা করেন, উসমান তাকে বলেন, প্রতারণাহীন আগ্রহের বিয়ে ব্যতীত হালাল হবে না”। আলি থেকে বর্ণিত :
لعن الله المحلل والمحلل له.
“হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে আল্লাহ তাআলা লানত করেছেন”। ইব্ন আব্বাস থেকে বর্ণিত :
لعن الله المحلل والمحلل له.
“হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে আল্লাহ লানত করেছেন”। ইব্ন ওমর থেকে বর্ণিত :
لعن الله المحلل والمحلل له والمحللة.
“হিল্লাকারী পুরুষ, হালালকৃত নারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় সকলের উপর আল্লাহ লানত করেছেন”। আব্দুল মালিক ইব্ন মুগিরা ইব্ন নাওফেল থেকে বর্ণিত,
أن ابن عمر سئل عن تحليل المرأة لزوجها قال: ذلك السفاح لو أدرككم عمر لنكلكم.
“ইব্ন ওমরকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, স্ত্রীকে তার স্বামীর জন্য হালাল করার বিধান কি, তিনি বলেন : এটা যেনা, যদি ওমর তোমাদের দেখত, তাহলে অবশ্যই তিনি তোমাদের শাস্তি দিতেন”। এ বাণী বর্ণনা করেন আবু ইব্ন আবি শায়বাহ। জুহরি আব্দুল্লাহ ইব্ন শারিক থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন আমি ইব্ন ওমরকে শোনেছি, তাকে হিল্লাকারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি বলেন :
لا يزالان زانيين وإن مكثا عشرين سنة إذا علم الله سبحانه أنهما أراد أن يحلها له.
“তারা উভয়ে যেনা অবস্থায় থাকবে, যদিও এভাবে তারা বিশ বছর পার করে, যদি আল্লাহ জানেন যে, এদের উভয়ের নিয়ত হচ্ছে স্ত্রীকে প্রথম স্বামীর জন্য হালাল করা”। ইমরান ইব্ন হারেস সুলামি থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি ইব্ন আব্বাসের নিকট এসে বলে, তার চাচা নিজ স্ত্রীকে তালাক দিয়ে অনুতপ্ত, তিনি বলেন :
عمك عصى الله فأندمه وأطاع الشيطان فلم يجعل له مخرجا قال: أرأيت إن أنا تزوجت من غير علم منه أترجع إليه؟ قال: من يخادع الله يخدعه الله.
“তোমার চাচা আল্লাহর নাফরমানি করেছে, তাই আল্লাহ তাকে লজ্জিত করেছেন, সে শয়তানের আনুগত্য করেছে, তার জন্য আল্লাহ কোন পথ রাখেননি, সে বলল : আমি যদি তার অজান্তে তাকে বিয়ে করি, সে কি তার নিকট ফিরে যেতে পারবে ? তিনি বললেন : আল্লাহকে যে ধোঁকা দেয় আল্লাহ তাকে ধোঁকা দেবেন”। এসব হাদিস ও বাণী সাহাবাদের থেকে প্রসিদ্ধ। হিল্লার যে ইচ্ছা করে সেই হিল্লাকারী, তার এ ইচ্ছা প্রকাশ করুক বা গোপন রাখুক। ওমর রাদিআল্লাহু এসব ক্ষেত্রে শাস্তি প্রদান করতেন। হিল্লাকারী ও তার স্ত্রীর মাঝে পৃথক করে দেয়া হবে, যদিও বিয়ের পর সর্বদার জন্য ঘর-সংসার করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়, যদি শুরুতে হিল্লার ইচ্ছা থাকে। আর তিন তালাক দাতা ব্যক্তি যদিও কষ্ট পায়, লজ্জিত হয় এবং তালাকের কারণে বড় মুসিবতের সম্মুখীন হয়, তার জন্য হিল্লা করা বৈধ নয়, যদিও সে তালাকের পরিণতি সম্পর্কে না জানে। এসব বর্ণনায় হিল্লার প্রতি যে কঠোরতা ও নিষেধাজ্ঞা প্রকাশ পায়, তার থেকেই প্রমাণ হয় যে হিল্লা হারাম, হিল্লাকারী ব্যক্তি ওমর রা. ও তার পরবর্তী খলিফাদের জমানায় শাস্তি ভোগ করত। ইব্ন তাইমিয়া রহ. বলেন : আমরা কিতাবের শুরুতে হাসান বসরি থেকে বর্ণনা করেছি,
أنه قال له رجل إن رجلا من قومي طلق امرأته ثلاثا فندم وندمت فأردت أن أنطلق فأتزوجها وأصدقها صداقا ثم أدخل بها كما يدخل الرجل بامرأته ثم أطلقها فقال له الحسن إتق الله يا فتى ولا تكون مسمار نار لحدود الله.
“এক ব্যক্তি তাকে বলে, আমার বংশের এক লোক তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে, এখন সে ও তার স্ত্রী লজ্জিত, আমি ইচ্ছা করছি আমি তাকে বিয়ে করি, মোহর প্রদান করি অতঃপর তার সাথে মিলিত হই, যেরূপ স্বামী তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়, অতঃপর আমি তাকে তালাক দেই। হাসান তাকে বলেন : হে যুবক আল্লাহকে ভয় কর, তুমি আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে জাহান্নামের পেরেকে পরিণত হয়ো না। হাসান থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন : মুসলমানগণ হিল্লাকারীকে ভাড়া করা পাঠা বলতেন। এর দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, হিল্লার নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সাহাবাদের যুগে মুসলমানদের নিকট প্রসিদ্ধ ছিল। দেখুন : ইব্ন তাইমিয়াহ রা. রচিত, “ইকামাতুত দালিল আলা ইবতালিত তাহলিল” গ্রন্থ।
ওমর রাদিআল্লাহু আনহুর বাণী ইব্নুল মুনজির নিম্নের শব্দে বর্ণনা করেন :
عن عمر بن الخطاب أنه قال : لا أوتى بمحلل ولا محللة إلا رجمتهما
“আমার নিকট হিল্লাকারী পুরুষ অথবা নারী পেশ করা হলে, আমি তাদেরকে প্রস্তরাঘাত করব”। ইগাসাতুল লাহফান লি ইব্নুল কাইয়্যূম : (১/৪১১), তিনি বিশুদ্ধ সনদে তার এ বাণী বর্ণনা করেন।
وعن ابن عمر أن رجلا سأله فقال ما تقول في امرأة تزوجتها أحلها لزوجها لم يأمرني ولم يعلم فقال له ابن عمر لا إلا نكاح رغبة إن أعجبتك أمسكتها وإن كرهتها فارقتها وإنا كنا نعد هذا سفاحا على عهد رسول الله.
ইব্ন ওমর রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাসা করে, এমন নারী সম্পর্কে আপনি কি বলেন, যাকে আমি বিয়ে করেছি তার প্রথম স্বামীর জন্য হালাল করার নিয়তে, সে আমাকে নির্দেশ দেয়নি এবং আমার নিয়ত সম্পর্কে সে জানেও না। ইব্ন ওমর রা. বলেন, “আগ্রহ ব্যতীত কোন বিয়ে নেই, তোমার ভাল লাগলে তুমি রেখে দিবে, আর অপছন্দ হলে তাকে ত্যাগ করবে, আমরা এটাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ব্যাভিচারই গণ্য করতাম”। ইমাম আবু ইসহাক তাগলাবি ও ইমাম আবু মুহাম্মদ মাকদিসি এ বাণী উল্লেখ করেছেন। দেখুন : ইব্ন তাইমিয়াহ রা. রচিত, “ইকামাতুত দালিল আলা ইবতালিত তাহলিল” গ্রন্থ।
وقال إبراهيم النخعي إذا كان نية أحد الثلاثة الزوج الأول أو الزوج الآخر أو المرأة التحليل فنكاح الآخر باطل ولا تحل للأول.
ইবরাহিম নখয়ি রহ. বলেন, যদি তিনজনের কারো হালাল করার ইচ্ছা থাকে, প্রথম স্বামী, দ্বিতীয় স্বামী অথবা স্ত্রীর, তাহলে দ্বিতীয় স্বামীর বিয়ে বাতিল, প্রথম স্বামীর জন্য সে হালাল হবে না। দেখুন : ইব্ন তাইমিয়াহ রা. রচিত, “ইকামাতুত দালিল আলা ইবতালিত তাহলিল” গ্রন্থ।
وقال الحسن البصري إذا هم أحد الثلاثة بالتحليل فقد أفسد .
হাসান বসরী রহ. বলেন : তিন জনের কারো যদি হালাল করার ইচ্ছা থাকে তাহলে বিয়ে বাতিল। দেখুন : ইব্ন তাইমিয়াহ রা. রচিত, “ইকামাতুত দালিল আলা ইবতালিত তাহলিল” গ্রন্থ।
وقال سعيد بن المسيب إمام التابعين في رجل تزوج امرأة ليحلها لزوجها الأول فقال لا تحل وممن قال بذلك مالك بن أنس والليث بن سعد وسفيان الثوري والإمام أحمد وقال إسماعيل بن سعيد سألت الإمام أحمد عن الرجل يتزوج المرأة وفي نفسه أن يحللها لزوجها الأول ولم تعلم المرأة بذلك فقال هو محلل وإذا أراد بذلك الإحلال فهو ملعون.
তাবেয়িদের ইমাম সায়িদ ইব্ন মুসাইয়্যেব রহ. জনৈক ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন, যে প্রথম স্বামীর জন্য স্ত্রীকে হালাল করার নিয়তে বিয়ে করেছিল, তিনি বলেন সে হালাল হবে না। অনুরূপ মন্তব্য পেশ করেছেন মালেক ইব্ন আনাস রহ., লাইস ইব্ন সা’দ, সুফিয়ান ইব্ন সাওরি রহ. ও ইমাম আহমদ। ইসমাঈল ইব্ন সায়ীদ বলেন : আমি ইমাম আহমদকে জনৈক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি, যে প্রথম স্বামীর জন্য হালাল করার নিয়তে বিয়ে করে, কিন্তু নারী এ নিয়ত সম্পর্কে জানে না, তিনি বলেন এ ব্যক্তি হিল্লাকারী, যদি সে এ বিয়ের মাধ্যমে হালাল করার ইচ্ছা করে, তাহলে সে অভিশপ্ত। দেখুন : ইব্ন তাইমিয়াহ রা. রচিত, “ইকামাতুত দালিল আলা ইবতালিত তাহলিল” গ্রন্থ।
উপরের আলোচনা থেকে আমাদের নিকট স্পষ্ট হল যে, হিল্লা বিয়ে ইসলামের বৈধ কোন পন্থা বা স্বীকৃত উপায় নয়, বরং তা ইসলামে নিষিদ্ধ, নিন্দিত, অভিশপ্ত ও কবিরা গুনা। নিচে আমরা হিল্লার ব্যাপারে বিশিষ্ট মুফতি, মুসলিম স্কলার ও মহান মনীষীদের ছয়টি ফতোয়া উল্লেখ করছি :
ফতোয়া : (১)
‘লাজনায়ে দায়েমা’ তথা সউদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটির ফতোয়া নং (১০৭২৬)
জনৈক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে, এখন সে তাকে ফিরে পেতে চায়, তালাকের বৈধ পদ্ধতি কি?
প্রশ্ন : শরীয়াতের বিধান মোতাবিক হিল্লার পদ্ধতি কী ? জায়েদ তার সাবেক স্ত্রী সাফিয়াকে তালাক দিয়েছে, অতঃপর সে পুনরায় তাকে হালাল করে নিতে চায়, ফলে দ্রুত বীর্যপাতের রোগী আমর তাকে বিয়ে করে, সে সহবাসে সক্ষম কিন্তু তার রোগের কারণে এ কাজে সে দুর্বল, আমর সাফিয়াকে বিয়ে করে তার সাথে কয়েক দিন ঘর-সংসার করে তাকে তালাক দিয়েছে, এখন সাফিয়া তার পূর্বের স্বামী জায়েদকে বিয়ে করতে চায়, এটা কি বৈধ ? আশা করি বিষয়টি স্পষ্ট করবেন, এবং শরয়ীভাবে তালাক দেয়ার পদ্ধতি কি, জায়েদ তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে তার কি করা উচিত ?
উত্তর :
প্রথমত : পুরুষ যদি কোন নারীকে হিল্লার শর্তে বিয়ে করে অথবা তার নিয়ত করে অথবা উভয় হিল্লাহর উপর একমত হয়, তাহলে বিয়ে বা আকদ বাতিল, আর বিয়ে অশুদ্ধ ও অবৈধ। ইমাম আহমদ ও ইমাম তিরমিজি রহ. আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু থেকে বর্ণনা করেন :
হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়ের উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন। আবু হুরায়রা রা. থেকে ইমাম আহমদ : (৩২৩২), ইব্ন আবি শায়বাহ : (৪/২৯৬), বাযযার : (কাশফুল আসতার) (২/১৬৭), হাদিস নং : (১৪৪২), ইব্নুল জারুদ : (গাউসুল মাকদুদ) : (৩/২৫), হাদিস নং : (৬৮৪), বায়হাকি : (৭/২০৮), আরো দেখুন : ইলালুল হাদিস লি ইব্ন আবি হাতেম : (১/৪১৩), হাদিস নং : (১২২৭)। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, আমি মুহাম্মদ ইব্ন ইসামাঈলকে এ হাদিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেন এ হাদিসটি হাসান। ইমাম আহমদ ও ইমাম তিরমিজি এ সম্পর্কে ইব্ন মাসউদ থেকেও হাদিস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন :
لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم المحلل والمحلل له
“হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়ের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন”। সুনানে তিরমিযি : অধ্যায় আন-নিকাহ, হাদিস নং : (১১১৯), সুনানে আবু দাউদ : অধ্যায় আন-নিকাহ, হাদিস নং : (২০৭৬), সুনানে ইব্ন মাজাহ : অধ্যায় আন-নিকাহ, হাদিস নং : (১৯৩৫), মুসনাদে ইমাম আহমদ ইব্ন হাম্বল : (১/৮৭)। ইমাম তিরমিজি হাদিসটি হাসান ও সহিহ বলেছেন।
দ্বিতীয়ত : নারীর তালাক ও ইদ্দত শেষ হওয়ার পর কোন পুরুষ যদি তাকে আগ্রহসহ বিয়ে করে, হিল্লার শর্ত বা নিয়ত ব্যতীত, অতঃপর দ্বিতীয় স্বামী তার সাথে সহবাসে মিলিত হয়, এবং পরবর্তীতে দ্বিতীয় স্বামী তাকে তালাক দেয়, তাহলে প্রথম স্বামী তাকে পুনরায় বিয়ে করতে পারবে। আয়েশা রা. বলেন :
سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن رجل طلق امرأته (يعني ثلاثا) فتزوجت زوجا غيره فدخل بها، ثم طلقها قبل أن يواقعها أتحل لزوجها الأول؟ قالت: قال النبي صلى الله عليه وسلم: "لا تحل للأول حتى تذوق عسيلة الآخر ويذوق عسيلتها رواه الشيخان وأصحاب السنن، واللفظ لأبي داود .
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে, ফলে সে অন্য পুরুষকে বিয়ে করে তার সাথে নির্জনবাস করে, অতঃপর সহবাস ব্যতীতই স্বামী তাকে তালাক দেয়, সে কি পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হবে ? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : “প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে না, যতক্ষণ না সে অপরের সহবাসের স্বাদ গ্রহণ করে এবং সে তার সহবাসের স্বাদ গ্রহণ করে”।
সহিহ বুখারি, অধ্যায় আশ-শাহাদাত : (২৪৯৬), সহিহ মুসলিম, অধ্যায় আন-নিকাহ : (১৪৩৩), সুনানে তিরমিজি, অধ্যায় আন-নিকাহ : (১১১৮), সুনানে নাসায়ি, অধ্যায় আত-তালাক : (৩৪০৭), সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায় আত-তালাক : (২৩০৯), সুনানে ইব্ন মাজাহ, অধ্যায় আন-নিকাহ : (১৯৩২), মুসনাদে আহমদ ইব্ন হাম্বল : (৬/২২৬), মুয়াত্তা ইমাম মালেক, অধ্যায় আন-নিকাহ :(১১২৭), সুনানে দারামি, অধ্যায় আত-তালাক : (২২৬৭)।
সূত্র : লাজনায়ে দায়েমা লিল বুহুসিল ইলমিয়াহ ওয়াল ইফতা
কমিটির চেয়ারম্যান : আব্দুল আজিজ ইবন বাজ
ভাইস চেয়ারম্যান : আব্দুর রাজ্জাক আফিফি
সদস্য : আব্দুল্লাহ ইবন গুদাইয়ান
ফতোয়া : (২)
শায়খ মুহাম্মদ ইব্ন সালেহ আল-উসাইমিন এর ফতোয়া :
প্রশ্ন : আপনাদের দৃষ্টিতে শরীয়াতে হিল্লা বিয়ের বিধান কী ?
উত্তর : প্রথমে জানা প্রয়োজন যে, হিল্লা বিয়ে কি। কোন ব্যক্তির এমন নারীকে বিয়ে করার ইচ্ছা করা, যাকে তার স্বামী তিন তালাক দিয়েছে, অর্থাৎ তার স্বামী তাকে তালাক দিয়ে অতঃপর ফিরিয়ে নিয়েছে, আবার তালাক দিয়ে অতঃপর ফিরিয়ে নিয়েছে, পুনরায় তৃতীয়বার তাকে তালাক দিয়েছে। স্বামীর তিন তালাক প্রাপ্তা এ নারী পুনরায় তার স্বামীর জন্য বৈধ হবে না, যতক্ষণ না তাকে দ্বিতীয় স্বামী আগ্রহসহ বিয়ে করে তার সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়, অতঃপর সে ঐ স্বামী থেকে পৃথক হয় তার মৃত্যুর কারণে, অথবা তালাকের কারণে, অথবা বিয়ে ভেঙে দেয়ার কারণে, তাহলে সে প্রথম স্বামীর জন্য বৈধ হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন :
-(الطَّلاقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ )-(البقرة: من الآية229) إلى قول الله تعالى : -(فَإِنْ طَلَّقَهَا)-(البقرة: من الآية230) أي الثالثة -(َإِنْ طَلَّقَهَا فَلا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجاً غَيْرَهُ فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَنْ يَتَرَاجَعَا إِنْ ظَنَّا أَنْ يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ )-(البقرة: من الآية230)
কোন ব্যক্তি যদি এ ধরনের নারীকে বিয়ে করে, অর্থাৎ যাকে তার স্বামী তিন তালাক দিয়েছে, এ নিয়তে যে, যখন নারীটি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে, অর্থাৎ যখন সে তার সাথে সহবাস করবে, সে তাকে তালাক দিয়ে দেবে, অতঃপর নারীটি ইদ্দত পালন করে তার পূর্বের স্বামীর কাছে ফিরে যাবে। এ বিয়ে সংঘটিত হয় না, এ বিয়ে অবৈধ ও অভিশপ্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিয়েতে হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কেই অভিসম্পাত করেছেন। তিনি হিল্লাকারীকে ভাড়া করা পাঠা আখ্যা দিয়েছেন। কারণ সে ভাড়া করা পাঠার ন্যায়, যেমন বকরির মালিক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পাঠা ভাড়া করে অতঃপর তার মালিককে ফেরৎ দেয়। এ ব্যক্তি পাঠার ন্যায়, তার কাছে তালাক প্রাপ্তা নারীকে বিয়ে করা, অতঃপর তাকে পৃথক করে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ হিল্লা বিয়ে দু’ভাবে হয় :
এক. কাউকে বলা হল, আমাদের মেয়েকে তোমার কাছে বিয়ে দিচ্ছি এ শর্তে যে, তার সাথে সহবাস হলে তাকে তুমি তালাক দিয়ে দেবে।
দুই. কোন শর্ত ছাড়া শুধু অন্তরে নিয়ত গোপন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হল। এ নিয়ত স্বামীর মধ্যে আবার কখনো স্ত্রী ও তার অভিভাবকের মধ্যেও থাকতে পারে। যদি স্বামীর মধ্যে এ নিয়ত থাকে, মূলত পৃথক করার অধিকার সেই সংরক্ষণ করে, তাহলে এ আকদের মাধ্যমে তার জন্য স্ত্রী হালাল হবে না, কারণ এ বিয়ের মধ্যে বিয়ের মূল উদ্দেশ্যই তার ছিল না, অর্থাৎ মহব্বত, ভালবাসা এবং নিজেকে পবিত্র রাখা ও সন্তান লাভের আশা ইত্যাদিসহ আজীবন স্ত্রীর সাথে ঘর-সংসার করার বিয়ের যে মূল উদ্দেশ্য, তাই তার মধ্যে বিদ্যমান ছিল না, অতএব এ বিয়ে বিশুদ্ধ হবে না। আর নারী বা তার অভিভাবকের হিল্লার নিয়তের ব্যাপারে আলেমদের মত বিরোধ রয়েছে, এখন পর্যন্ত আমার কাছে বিশুদ্ধ মন্তব্য কোনটি স্পষ্ট নয়। মুদ্দাকথা : হিল্লা বিয়ে হারাম, এ বিয়ের ফলে নারী তার প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে না, কারণ এ বিয়েই শুদ্ধ নয়”। শায়খ উসাইমীন -রাহিমাহুল্লাহ – ‘ফতোয়া নুরুন আলাদ্দারব’, পৃষ্ঠা : (৫৭)
ফতোয়া : (৩)
হিল্লা বিয়ে হারাম ও বাতিল
প্রশ্ন : আমার এক বন্ধু তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে, আমি কি তাকে বিয়ে করে অতঃপর তালাক দিতে পারি, যেন সে তার প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যায় ?
উত্তর :
আল-হামদুলিল্লাহ
যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়, তখন সে তার জন্য হালাল হয় না, যতক্ষণ না দ্বিতীয় স্বামী তাকে বিয়ে করে। আল্লাহ তাআলা বলেন :
(فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجاً غَيْرَهُ) البقرة/230 .
“অতএব যদি সে তাকে (তৃতীয়) তালাক দেয় তাহলে সে পুরুষের জন্য হালাল হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ভিন্ন একজন স্বামী সে গ্রহণ না করে”। সূরা বাকারা : (২৩০)
এ বিয়ে বৈধ ও বিশুদ্ধ হওয়া শর্ত, অর্থাৎ যে বিয়ে দ্বারা স্ত্রী তার পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হয়, সে বিয়ে বিশুদ্ধ হওয়া জরুরী। অতএব নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিয়ে করা (যেমন মুতআ) অথবা প্রথম স্বামীর জন্য হালাল করার নিয়তে বিয়ে করা অতঃপর তালাক দেয়া উভয় সকল আলেমের মতে হারাম ও বাতিল। এ বিয়ের মাধ্যমে নারী প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে না। ‘আল-মুগনি’ : (১০/৪৯-৫৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত হিল্লা বিয়ে হারাম। ইমাম আবু দাউদ রহ. বর্ণনা করেন :
أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : (لَعَنَ اللَّهُ الْمُحَلِّلَ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ) . وصححه الألباني في سنن أبو داوود .
নবী সাল্লাল্রাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়ের উপর আল্লাহ তাআলা লানত করেছেন”। আবু দাউদ : হাদিস নং : (২০৭৬), আল-বানি রহ. সুনানে আবু দাউদে হাদিসটি সহিহ বলেছেন। ইব্ন মাজা উকবা ইব্ন আমের রা. থেকে বর্ণনা করেন :
أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : (أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِالتَّيْسِ الْمُسْتَعَارِ ؟ قَالُوا : بَلَى ، يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ : هُوَ الْمُحَلِّلُ ، لَعَنَ اللَّهُ الْمُحَلِّلَ ، وَالْمُحَلَّلَ لَهُ) وحسنه الألباني في صحيح سنن بن ماجة .
নবী সাল্লাল্রাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “আমি কি তোমাদেরকে ভাড়া করা পাঠা সম্পর্কে বলব ? তারা বলল : অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল, তিনি বললেন : সে হচ্ছে হিল্লাকারী, হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়ের উপর আল্লাহ লানত করেছেন”। সহিহ সুনানে ইব্ন মাজাতে আল-বানি হাদিসটি হাসান বলেছেন। ইব্ন মাজাহ : হাদিস নং : (১৯৩৬)
মুহাদ্দিস আব্দুর রাজ্জাক রহ. বর্ণনা করেন, ওমর ইব্নুল খাত্তাব রাদিআল্লাহ আনহু মানুষদের সম্মোধন করে বলেছেন :
(والله لا أوتى بمحلٍّ ومحلَّل له إلا رجمتهما) .
“আল্লাহর শপথ, আমার নিকট যদি হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয়েছে পেশ করা হয়, আমি তাদের উভয়কে অবশ্যই প্রস্তরাঘাত করব”। আব্দুর রাজ্জাক : হাদিস নং : (৫/২৬৫)
আকদের সময় নিয়ত প্রকাশ করা ও শর্ত দেয়া যে, যখনই সে প্রথম স্বামীর জন্য তাকে হালাল করবে, তখনই সে তাকে তালাক দিবে, অথবা কোন শর্ত ব্যতীত শুধু মনে হিল্লার নিয়ত করা উভয় সমান, কোন পার্থক্য নেই, বিয়ে শুদ্ধ হবে না, এর দ্বারা নারী প্রথম স্বামীর জন্য হালালও হবে না।
ইমাম হাকেম নাফে থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি ইব্ন ওমর রাদিআল্লাহু আনহুমাকে বলে :
امرأة تزوجتها أحلها لزوجها ، لم يأمرني ولم يعلم . قال : لا ، إلا نكاح رغبة ، إن أعجبتك أمسكها ، وإن كرهتها فارقها . قال : وإن كنا نعده على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم سفاحاً . وقال : لا يزالان زانيين ، وإن مكثا عشرين سنة .
আমি এক নারীকে তার স্বামীর জন্য হালাল করার নিয়তে বিয়ে করেছি, আমাকে সে নির্দেশ দেয়নি এবং আমার নিয়ত সম্পর্কে সে জানেও না। তিনি বললেন : না, আগ্রহের বিয়ে ব্যতীত হালাল হবে না, যদি তোমার পছন্দ হয় তাকে রেখে দেবে, আর যদি তোমার অপছন্দ হয় তাকে পৃথক করে দেবে। তিনি বললেন : আমরা এটাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে যেনা বিবেচনা করতাম। তিনি বলেন : তারা যেনা করতেই থাকবে, যদিও তারা এ অবস্থায় বিশ বছর অতিক্রান্ত করে।
ইমাম আহমদ ইব্ন হাম্বলকে জনৈক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল :
وسئل الإمام أحمد عن الرجل يتزوج المرأة ، وفي نفسه أن يحلها لزوجها الأول ، ولم تعلم المرأة بذلك . فقال : هو محلل ، إذا أراد بذلك الإحلال فهو ملعون .
ইমাম আহমদ ইব্ন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহকে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যে কোন নারীকে বিয়ে করে, কিন্তু তার অন্তরের নিয়ত হচ্ছে স্ত্রীকে তার প্রথম স্বামীর জন্য হালাল করা, অথচ নারী তার এ নিয়ত সম্পর্কে জানে না। তিনি বললেন : সে হিল্লাকারী, যদি সে এর দ্বারা হালাল করার ইচ্ছা করে, তাহলে সে অভিশপ্ত।
অতএব তোমার জন্য বৈধ নয়, প্রথম স্বামীর জন্য হালাল করার নিয়তে এ নারীকে বিয়ে করা। এমন করা কবিরা গুনা, এর দ্বারা বিয়ে শুদ্ধ হবে না, বরং যেনা হবে। আল্লাহর নিকট এর থেকে আমরা পানাহ চাই।
শায়খ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
সূত্র :
موقع الإسلام سؤال وجواب
ফতোয়া : (৪)
হিল্লা বিয়ের নিষেধাজ্ঞার হাদিস ও রিফাআর স্ত্রীর হাদিসের বৈপরিত্ব দূরীকরণ এবং সামঞ্জস্য বিধান।
প্রশ্ন : ইমাম আবু দাউদ তার সুনান গ্রন্থে বর্ণনা করেন :
أن النبي صلى الله عليه وسلم قال " لعن الله المحلل والمحلَل له".
নবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে আল্লাহ তাআলা লানত করেছেন”।
প্রথম স্বামীর জন্য হালাল করার নিয়তে নারীকে যে ব্যক্তি বিয়ে করে, সে হিল্লাকারী। আর যার জন্য হিল্লা করা হয়, সে হচ্ছে প্রথম স্বামী। উকবা ইব্ন আমের রাদিআল্লাহু আনহু সূত্রে ইব্ন মাজাহ বর্ণনা করেন :
أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: " ألا أخبركم بالتيس المستعار؟ قالوا: بلى يا رسول الله. قال: هو المحلل. لعن الله المحلل والمحلل له."
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমি কি তোমাদের ভাড়া করা পাঠা সম্পর্কে সংবাদ দেব না ? তারা বলল : অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল, তিনি বললেন : সে হচ্ছে হিল্লাকারী। হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন।
এ দুই হাদিস থেকে আমরা বুঝি শরিআতের দৃষ্টিতে হিল্লা হারাম, কিন্তু এর বিপরীতে সুনান আবু দাউদে আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত রয়েছে :
أن النبي صلى الله عليه وسلم سُئل عن رجل طلق زوجته ثلاثاً فتزوجت رجلاً اخر طلقها قبل أن يواقعها، فهل يجوز أن تعود لزوجها الأول.. فقالت عائشة رضي الله عنها: فأجاب النبي صلى الله عليه وسلم: لا تحل له حتى يذوق عسيلتها وتذوق عسيلته أي الزوج الثاني..
নবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লামকে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে, অতঃপর অপর ব্যক্তি তাকে বিয়ে করে সহবাস ব্যতীতই তালাক দেয়, তার জন্য কি প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যাওয়া বৈধ ? আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দেন : সে হালাল হবে না, যে পর্যন্ত না সে (দ্বিতীয় স্বামী) তার সহবাসের স্বাদ গ্রহণ করে এবং সে (স্ত্রী) তার (দ্বিতীয় স্বামীর) সহবাসের স্বাদ গ্রহণ করে।
এ হাদিস থেকে আমরা বুঝি হিল্লা বৈধ, তবে দ্বিতীয় স্বামীর তার সাথে সহবাস করা জরুরী। এর দ্বারা উভয় দলিলের বৈপরীত্ব কি স্পষ্ট হয় না ? প্রথম দুই হাদিস দ্বারা বুঝি হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয় অভিশপ্ত, আর দ্বিতীয় হাদিসে দেখি যে, এতে কোন সমস্যা নেই। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কি ?
উত্তর :
আল-হামদুলিল্লাহ
এসব হাদিসের মধ্যে কোন বৈপরীত্ব নেই, কারণ ব্যক্তি যখন তিন তালাক প্রাপ্তা নারীকে প্রথম স্বামীর জন্য হালাল করার নিয়তে বিয়ে করে, তখন এ বিয়ে হারাম, এ বিবাহকারীকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন।
আর রেফাআর স্ত্রীর হাদিস, সেখানে উল্লেখ নেই যে, আব্দুর রহমান ইব্ন জুবায়ের তাকে হালাল করার নিয়তে বিয়ে করেছেন, অধিকন্তু হাদিসের বর্ণনা প্রমাণ করে যে, তিনি তাকে আগ্রহ ভরে এবং স্থায়ীভাবে রাখার উদ্দেশ্যেই বিয়ে করেছেন, আর তার তলব করাতেই তিনি তাকে তালাক দিয়ে দেননি, বরং সে তার প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলে দিয়েছেন যে, দ্বিতীয় স্বামীর তার সাথে সহবাস না করা পর্যন্ত, তার জন্য এটা বৈধ হবে না, সে উল্লেখ করেছিল দ্বিতীয় স্বামী তার সাথে সহবাস করেনি।
রেফাআর স্ত্রীর হাদিসের কিছু শব্দ :
ইমাম বুখারি ও মুসলিম বর্ণনা করেন :
رواه البخاري (2639) ومسلم (1433) عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا : (جَاءَتْ امْرَأَةُ رِفاعَةَ الْقُرَظِيِّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ : كُنْتُ عِنْدَ رِفَاعَةَ فَطَلَّقَنِي فَأَبَتَّ طَلَاقِي فَتَزَوَّجْتُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ الزَّبِيرِ . فَقَالَ : ( أَتُرِيدِينَ أَنْ تَرْجِعِي إِلَى رِفَاعَةَ ؟ لَا ، حَتَّى تَذُوقِي عُسَيْلَتَهُ ، وَيَذُوقَ عُسَيْلَتَكِ ) .
আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে ইমাম বুখারি ও ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন : “বনু কুরাইজা বংশের রিফাআর স্ত্রী নবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলে : আমি রিফাআর নিকট ছিলাম, সে আমাকে তিন তালাক দেয়, অতঃপর আমি আব্দুর রহমান ইব্ন জুবায়েরকে বিয়ে করি। অতঃপর তিনি বলেন : তুমি কি রিফাআর কাছে ফিরে যেতে চাও ? না, যেতে পারবে না, যতক্ষণ না তুমি তার সহবাসের স্বাদ গ্রহণ কর এবং সে তোমার সহবাসের স্বাদ গ্রহণ করে”। বুখারি : (২৬৩৯), মুসলিম : (১৪৩৩)
ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন :
وروى مسلم (1433) عَنْ عَائِشَةَ رضي الله عنها قَالَتْ : طَلَّقَ رَجُلٌ امْرَأَتَهُ ثَلَاثًا فَتَزَوَّجَهَا رَجُلٌ ثُمَّ طَلَّقَهَا قَبْلَ أَنْ يَدْخُلَ بِهَا ، فَأَرَادَ زَوْجُهَا الْأَوَّلُ أَنْ يَتَزَوَّجَهَا ، فَسُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ ذَلِكَ فَقَالَ : ( لَا حَتَّى يَذُوقَ الْآخِرُ مِنْ عُسَيْلَتِهَا مَا ذَاقَ الْأَوَّلُ ) .
আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন : “এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়, ফলে অপর ব্যক্তি তাকে বিয়ে করে সহবাসের পূর্বেই তালাক দেয়, অতঃপর প্রথম স্বামী তাকে ফিরিয়ে নিতে চায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লামকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন : না, যতক্ষণ না দ্বিতীয় ব্যক্তি তার স্বাদ গ্রহণ করে, যেমন প্রথম ব্যক্তি গ্রহণ করেছে”। মুসলিম : (১৪৩৩)
এসব হাদিসে উল্লেখ নেই যে, আব্দুর রহমান তাকে হিল্লার নিয়তে বিয়ে করেছেন, বরং মহিলা নিজেই তার প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্তি করেছে। মহিলার এ নিয়তের কারণে বিয়ে হিল্লা হবে না, যেহেতু তার হাতে তালাকের অধিকার নেই।
শায়খুল ইসলাম ইব্ন তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন :
“নারী যখন প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য তা বৈধ রেখেছেন, যখন দ্বিতীয় স্বামী তার সাথে সহবাস করে। তিনি স্পষ্ট বলেননি মহিলার মধ্যে এ নিয়ত পরে সৃষ্টি হয়েছে, না আগে থেকেই ছিল, এ দ্বারা বুঝা যায় উভয় অবস্থায় নারী প্রথম স্বামীর জন্য হালাল। কারণ নারীর অন্তরে যদি স্বামীর মহব্বত থাকে, আর এমতাবস্থায় কোন কারণে সে তালাকের শিকার হয়, তাহলে অধিকাংশ সময় সে স্বামীকে ভুলতে পারে না, স্বামীর অনেক স্মৃতিই তাকে আন্দোলিত করে। আর নারীরা সাধারণত তালাককে খুব ঘৃণা করে এবং অন্যদের সাথে সংসার করার চাইতে পূর্বের স্বামীর নিকট ফিরে যেতেই পছন্দ করে”। “আল-ফতোয়া আল-কুবরা” : (৬/৩০১)
ইব্ন আব্দুল বারর রাহিমাহুল্লাহ বলেন : “রিফাআর স্ত্রীকে সম্মোধন করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : (أتريدين أن ترجعي إلى رفاعة) “তুমি কি রিফাআর নিকট ফিরে যেতে চাও ?” এর দ্বারা বুঝা যায়, স্ত্রীর মধ্যে প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যাওয়ার ইচ্ছার কারণে বিবাহকারীর সমস্যা হবে না, এটা হিল্লার অর্থও বহন করে না, যে হিল্লাকারী অভিশপ্ত”। “আত-তামহিদ” : (১৩/২২৭)
ইব্নুল কাইয়ূম রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন : “স্ত্রীর নিয়ত বা তার অভিভাবকের নিয়ত বিয়ের মধ্যে প্রভাব ফেলবে না, বরং দ্বিতীয় স্বামীর নিয়তই এখানে কার্যকর। দ্বিতীয় স্বামী যদি হিল্লার নিয়ত করে, তাহলে সে লানতের উপযুক্ত হবে, অতঃপর প্রথম স্বামী লানতের উপযুক্ত হবে, যদি এ বাতিল বিয়ের মাধ্যমে তালাক প্রাপ্তা নারীকে ফিরিয়ে নেয়। অতএব দ্বিতীয় স্বামী ও প্রথম স্বামী যদি নারী অথবা তার অভিভাবকের অন্তরে বিদ্যমান হিল্লার নিয়ত সম্পর্কে না জানে, তাহলে বিয়েতে কোন সমস্যা হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রিফাআর স্ত্রী থেকে জেনেছেন, সে তার নিকট ফিরে যেতে চায়, এ নিয়তের কারণে যেতে পারবে না তিনি বলেননি, বরং সহবাস না হওয়াকে তিনি না যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন : “যতক্ষণ না তুমি তার সহবাস করার স্বাদ গ্রহণ কর এবং সে তোমার সহবাস করার স্বাদ গ্রহণ করে”। “ইলামুল মুআক্কিয়িন” : (৪/৪৫-৪৬) আল্লাহ ভাল জানেন।
শায়খ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
সূত্র :
موقع الإسلام سؤال وجواب
ফতোয়া : (৫)
প্রথম স্বামীর জন্য বৈধ হওয়ার নিয়তে তিন তালাক প্রাপ্তা নারীর বিয়ে করার বিধান
প্রশ্ন : কয়েক বছর আগে আমি বোকামি ও নির্বুদ্ধিতার কাজ করে বসেছি, কিছু মিথ্যা ও অসত্য অযুহাতে আমরা শরয়ি আদালত ও তার ফয়সালা থেকে দূরে থাকি। তালাকের পর একদিন আমি ও আমার স্ত্রী অনুভব করি, আমরা আমাদের নিজেদের ও সন্তানদের ব্যাপারে মস্ত বড় ভুল করে ফেলছি। আমরা এমন কোন স্থান অবশিষ্ট রাখিনি, যেখানে আমরা যায়নি, উদ্দেশ্য ছিল হয়তো শরয়ি কোন পন্থায় আমরা উভয়ে পুনরায় স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঘর-সংসার সুযোগ লাভ করব, কিন্তু আলেমদের সবাই বলেছেন, তোমরা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ফিরে যেতে পারবে না, যতক্ষণ না সে অন্য স্বামীকে বিয়ে করে তার সাথে সহবাস করে, অতঃপর সে তাকে তালাক দেয় অথবা আল্লাহ তাকে মৃত্যু দেন। আমি এবং সে প্রতিদিন টেলিফোনের মাধ্যমে সন্তানদের ব্যাপারে আলোচনা করি। সে যদি আমার জন্য হালাল হওয়ার নিয়তে কোন ব্যক্তিকে সমঝোতা ব্যতীত বিয়ে করে, তবে আমি তার নিয়ত সম্পর্কে জানি, এটা কি বৈধ হবে ? সে যখন সহবাসের পর তার নিকট তালাক তলব করে অথবা তার সাথে সমঝোতায় এসে বিয়ে ভঙ্গ করে, সে কি আমার জন্য বৈধ হবে ? আমরা এখন কি করতে পারি, যেন স্ত্রী তার স্বামী ও প্রিয় ব্যক্তির নিকট ফিরে যায় এবং সন্তানেরা ফিরে যায় তাদের পিতার নিকট ?
উত্তর :
আল-হামদুলিল্লাহ
যখন স্বামী তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়, সে তার জন্য হালাল হবে না, যতক্ষণ না অপর স্বামীকে বিয়ে করে। পছন্দ ও আগ্রহের বিয়ে হতে হবে, হিল্লার বিয়ে নয়, অতঃপর স্বামী থেকে পৃথক হয়। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন :
(فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجاً غَيْرَهُ) البقرة/230 .
“অতএব যদি সে তাকে তালাক দেয় তাহলে সে পুরুষের জন্য হালাল হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ভিন্ন একজন স্বামী সে গ্রহণ না করে”। সূরা বাকারা : (২৩০)
ইমাম আবু দাউদ বর্ণনা করেন :
أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : ( لَعَنَ اللَّهُ الْمُحَلِّلَ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ ) . وصححه الألباني في سنن أبو داود .
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে আল্লাহ তাআলা লানত করেছেন”। আবু দাউদ : হাদিস নং : (২০৭৬)
এ হিল্লা যদি হয় তালাকদাতা, স্ত্রী ও হিল্লাকারীর সমন্বয়ে, তাহলে বিষয়টি স্পষ্ট, এটা হারাম, কবিরা গুনার একটি। অনুরূপ হিল্লাকারী যদি অনুগ্রহ ও দয়াপরবশ হয়ে এর নিয়ত করে, তাহলেও জমহুর ফুকাহায়ে কেরামের নিকট এ হিল্লা হারাম।
তবে তারা এ বিষয়ে একমত হতে পারেননি যে, যদি নারী হিল্লার ইচ্ছা গোপন রেখে দ্বিতীয় ব্যক্তিকে বিয়ে করে, অতঃপর তাকে তালাক দিতে বলে অথবা বিবাহ ভঙ্গের আহ্বান জানায়, যেন প্রথম স্বামীর নিকট সে ফিরে যেতে পারে। একদল আহলে ইলম বলেছেন –যা হাম্বলিদের বিশুদ্ধ অভিমত এবং হাসান ও ইবরাহিম নখয়িরও অভিমত- এ হিল্লা হারাম, বাতেনিভাবে সে তার প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে না, অর্থাৎ তার মাঝে ও তার রবের মাঝে এ বিয়ে শুদ্ধ নয়, যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে বিচারকের নিকট এ বিয়ে শুদ্ধ।
অপর একদল আলেম বলেছেন তার নিয়ত কোন প্রভাব ফেলবে না, দ্বিতীয় স্বামী যদি তাকে তালাক দেয়, প্রথম স্বামীর জন্য সে হালাল হবে। মালেকি ও হাম্বলিরা এ অভিমত গ্রহণ করেছেন।
কিন্তু প্রথম অভিমতই বিশুদ্ধ, কারণ তার এ কর্ম মূলত শরিয়তের হারাম জিনিসকে হালাল করার জন্য বাহানা মাত্র, কারণ শরিয়ত তাকে প্রথম স্বামীর নিকট যেতে নিষেধ করেছে, যতক্ষণ না দ্বিতীয় বিয়ে পছন্দ ও স্থায়ীভাবে ঘর-সংসার করার নিয়তে সংগঠিত হয়, সাময়িক বিয়ে যথেষ্ট নয় যার দ্বারা সে প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যেতে চায়, দ্বিতীয়ত তার এ কর্ম দ্বিতীয় স্বামীকে ধোঁকা দেয়া ও তার সাথে প্রতারণা করার শামিল এবং তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রবল আশঙ্কা, কারণ হয়তো সে তার থেকে ছুটতে পারবে না, যতক্ষণ না তার জীবনকে বিষিয়ে দেবে ও তার সাথে দুর্ব্যবহার করবে, অবশেষে সে তাকে তালাক দেবে অথবা তার সাথে সমঝোতা করবে।
শাইখুল ইসলাম ইব্ন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন : “হাসান, নখয়ি ও অন্যান্য ইমামগণ বলেন : যদি তিনজনের কেউ হিল্লার নিয়ত করে, তাহলে তা হিল্লা বিয়ে। ইব্নুল মুসাইয়্যেব থেকেও অনুরূপ বর্ণনা করা হয়। ইবরাহিম নখয়ির শব্দ :
إذا كانت نية أحد الثلاثة : (الزوج الأول ، أو الزوج الثاني ، أو المرأة) أنه محلل فنكاح هذا الأخير باطل ، ولا تحل للأول .
যদি তিনজনের কেউ (প্রথম স্বামী অথবা দ্বিতীয় স্বামী অথবা নারী) হিল্লার নিয়ত করে, তাহলে দ্বিতীয় বিয়ে শুদ্ধ হবে না, আর সে প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে না।
এর কারণ : নারী যখন পুরুষকে বিয়ে করে, অথচ সে পুরুষের ব্যাপারে আগ্রহী নয়, তাহলে সে আগের ব্যাখ্যা অনুযায়ী বিবাহকারী নয়, বরং সে আল্লাহর আয়াতের সাথে উপহাসকারী ও আল্লাহর বিধানের সাথে তামাশাকারী, সে মূলত পুরুষকে ধোঁকাদানকারী ও তার সাথে প্রতারণাকারী। একা সে যদিও বিচ্ছেদের মালিক নয়, কিন্তু সে বিচ্ছেদের কারণ ঘটানোর ইচ্ছা রাখে, যার দ্বারা তার কার্য সিদ্ধ হয়, যেমন তার থেকে খোলা করার নিয়ত রাখে, তার ব্যাপারে সে উদাসীনতা দেখাবে, তাকে অপছন্দ করবে ও তার সাথে বিদ্বেষ পোষণ করবে, যা স্বামীকে প্ররোচিত করবে তার সাথে খোলা অথবা তাকে তালাক দেয়ার প্রতি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা ঘটেও যায়, অতঃপর এর সাথে স্বামীর অবাধ্য হওয়ার ইচ্ছা করা, তার অপছন্দের কাজ করা ও তার পছন্দের কাজ পরিহার করা ইত্যাদি হারাম, সাধারণত এসব বিষয় স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেয়, অতএব তার এসব কর্ম শরয়ি দৃষ্টিতে প্রকৃত বিচ্ছেদের নিয়ত করার শামিল- যা হারাম। আর যদি সে হারাম কাজ করা বা ওয়াজিব ত্যাগ করার নিয়ত নাও করে, সে তো স্বামীকে চায় না, যার থেকে ধারণা হয় সে তার সাথে আল্লাহর বিধান কায়েম করবে না, উভয়ের বিয়ের উদ্দেশ্যও সফল হবে না, ফলে বিচ্ছেদ অনিবার্য। তাই নারীর নিয়তও দ্বিতীয় বিয়েতে প্রভাব ফেলবে।
আরো এ জন্য যে, বিবাহ এমন এক বন্ধন, যা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভালবাসা ও মহব্বত সৃষ্টি করে, যেমন আল্লাহ তাআলা তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন, যার উদ্দেশ্য একত্র সংসার করা ও দাম্পত্য জীবন যাপন করা, আর নারী যদি বিবাহের আকদ থেকেই স্বামীর সাথে থাকা অপছন্দ করে এবং তার সাথে বিচ্ছেদ চায়, তাহলে বিবাহ বিশুদ্ধরূপে সংগঠিত হল না, যার দ্বারা বিয়ের উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে।
আরো এ জন্য যে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন :
(فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَنْ يَتَرَاجَعَا إِنْ ظَنَّا أَنْ يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ)
“তাহলে তাদের উভয়ের অপরাধ হবে না যে, তারা একে অপরের নিকট ফিরে আসবে, যদি দৃঢ় ধারণা রাখে যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা কায়েম রাখতে পারবে”। সূরা বাকারা : (২৩০)
একমাত্র সে বিয়েই বৈধ, যেখানে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করার প্রবল ধারণা হয়, কিন্তু এ ধরনের নারী আল্লাহর বিধান কায়েম করার ইচ্ছা রাখে না, কারণ স্বামীর প্রতি স্ত্রীর নারাজিই এ ধারণা শেষ করে দেয়, অধিকন্তু নারী বিবাহ দ্বারা স্বামীর সুবিধা ভোগ করে, যেমন পুরুষ নারীর সুবিধা ভোগ করে, আর নারী যেহেতু হালাল হওয়া ও প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যাওয়ার নিয়তে বিয়ে করছে, দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সংসার করার নিয়তে নয়, তাহলে সে মূলত বিবাহ বা স্বামী হিসেবে তাকে ইচ্ছা করেনি। অতএব হিল্লা রহিত করণ ও তার পথ বন্ধ করার বিধান মোতাবেক এ বিয়ে শুদ্ধ হবে না”। “ফাতোয়া আল-কুবরা” : (৬/২৯৮)
এসব কারণেই শায়খুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন, হাম্বলিদের বৃহৎ একটি জামাতের অভিমত হচ্ছে, নারী যদি হিল্লার ইচ্ছা করে, তাহলে সে প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে না।
“মাতালেবে উলিননুহা” (৫/১২৭) গ্রন্থে আছে : “যার হাতে বিচ্ছেদের ক্ষমতা নেই, তার নিয়তের কোন মূল্য নেই... অতএব স্ত্রী বা তার অভিভাবকের নিয়তের কোন প্রভাব পড়বে না, কারণ তাদের হাতে বিচ্ছেদের ক্ষমতা নেই। “ইলামুল মুআক্কিয়িন” গ্রন্থে আছে : এর প্রমাণ হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের বাণী : (أَتُرِيدِينَ أَنْ تَرْجِعِي إِلَى رِفَاعَة) . “তুমি কি রিফাআর নিকট ফিরে যেতে চাও ?” ইমাম আহমদ বলেন : সে হিল্লার নিয়ত করেছিল, কিন্তু নারীর নিয়তের কোন মূল্য নেই, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ( لعن الله المحلل والمحلل له ) . “হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে আল্লাহ তাআলা লানত করেছেন”। এখানে নারীর কিছুই নয়। কিন্তু আমাদের এক দল সাথী বলেছেন, এর দ্বারা স্ত্রী হালাল হবে না, আর এটাই বিশুদ্ধ অভিমত”। আরো দেখুন : “আল-মুগনি” : (৭/১৩৯), “কাশশাফুল কিনা” : (৫/৯৬), “হাশিয়াতুদ দুসুকি” : (২/২৫৮), “ইলামুল মুআক্কিয়িন” : (৪/৩৬)
শায়খ ইব্ন উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন : “নারী যদি হিল্লার নিয়ত করে, অতঃপর প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হওয়ার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় বিয়েতে রাজি হয় ? লেখকের স্পষ্ট বক্তব্য বলে নারীর নিয়তের কোন মূল্য নেই, এর কারণ তার হাতে কিছুই নেই, দ্বিতীয় স্বামী তাকে তালাক দেবে না, যেহেতু সে পছন্দের কারণেই বিয়ে করেছে, অতএব তার ঘারে এর কোন প্রভাব পড়বে না, অনুরূপ নারীর অভিভাবকের নিয়তের বিষয়। এ জন্যই কতক মুফতির বাক্য নীতির মর্যাদা গ্রহণ করেছে, : যেমন যার হাতে বিচ্ছেদের ক্ষমতা নেই, তার নিয়তের কোন মূল্য নেই। এ হিসেবে নারী ও তার অভিভাবকের নিয়তের কারণে বিয়েতে কোন প্রভাব পড়বে না, কারণ তাদের হাতে বিচ্ছেদের ক্ষমতা নেই।
কতক আলেম বলেছেন : নারী ও তার অভিভাবকের নিয়ত স্বামীর নিয়ত অনুরূপ। তারা মেনে নিয়েছেন যে, তাদের হাতে বিচ্ছেদের ক্ষমতা নেই, কিন্তু তারা বলেছেন : তাদের সুযোগ রয়েছে, তারা বিবাহ ভঙ্গের চেষ্টা করবে, যেমন স্বামীর উপর বিরুক্তির সৃষ্টি করবে, যেন সে তাকে তালাক দেয়, অথবা তাকে অর্থের প্রলোভন দেখাবে, বিবাহ মূলত স্বামী-স্ত্রীর মাঝে একটি বন্ধন ও চুক্তি, যদি স্বামীর নিয়ত প্রভাব সৃষ্টিকারী হয়, তাহলে অবশ্যই নারীর নিয়ত প্রভাব সৃষ্টি করবে।
আমাদের কাছে সত্বা তিনটি : স্বামী, স্ত্রী ও অভিভাবক। বিশুদ্ধ মতে এ তিন জনের কেউ হিল্লার নিয়ত করলে বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে, যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালল্লাম বলেছেন : (إنما الأعمال بالنيات) “নিশ্চয় কর্মের ভিত্তি হচ্ছে নিয়তের উপর”। যখন আকদ হয়েছে, তখন অভিভাবক যেমন স্থায়ী বিয়ের নিয়ত করেনি, অনুরূপ নারীও।
যদি কেউ বলে : রিফাআর স্ত্রী আব্দুর রহমান ইব্ন জুবায়ের রা.-কে বিয়ে করে রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অভিযোগ পেশ করে, তার সাথে যা আছে, তা কাপড়ের আঁচলের ন্যায়। তিনি তাকে বলেন : (أَتُرِيدِينَ أَنْ تَرْجِعِي إِلَى رِفَاعَة) ، , “তুমি কি রিফাআর নিকট ফিরে যেতে চাও ? সে বলে : হ্যাঁ, এ থেকেও কি বুঝা যায় না, নারীর নিয়তের কোন প্রভাব নেই ? আমরা বলব : রিফাআর স্ত্রীর এ ইচ্ছা কখন থেকে, বিয়ের আগ থেকে, না দ্বিতীয় স্বামীর মধ্যে এ দোষ দেখার পর থেকে ? স্পষ্টত বুঝে আসে, দোষ দেখার পর থেকেই, কারণ আব্দুল্লাহকে বিয়ে করা ও তার সাথে সহবাস করার ক্ষেত্রে তার কোন আপত্তি ছিল না, কিন্তু সে যখন অভিযোগ নিয়ে এসেছে, এ থেকে স্পষ্টত বুঝে আসে যে, যদি তার মধ্যে সে এ দোষ না দেখত, তাহলে সে অভিযোগ নিয়ে আসত না। আল্লাহ ভাল জানেন। এ হাদিসে আরো সম্ভাবনা বিদ্যমান”। “আশ-শরহুল মুমতি” : (১২/১৭৭) আল্লাহ ভাল জানেন।
শায়খ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
সূত্র :
موقع الإسلام سؤال وجواب
ফতোয়া : (৬)
তালাকদাতা তার স্ত্রীকে কিভাবে ফিরিয়ে আনবে
প্রশ্ন :
সাধারণত বিবাহের সময় যে কোন ব্যক্তি তার পিতা-মাতার সম্মতি প্রয়োজন বোধ করে, কিন্তু স্বামী-স্ত্রী যদি পৃথক হয়ে যায়, এখন আবার তারা দু’জনে মিলিত হতে ইচ্ছা করে, তাহলেও কি তাদের পরিবারের সম্মতি এবং পূর্বের সকল আনুষ্ঠানিকতা পুরো করা জরুরী ?
উত্তর :
আল-হামদুলিল্লাহ
স্বামী যখন তার স্ত্রীকে তালাক দেয়, আর এ তালাক যদি প্রথম অথবা দ্বিতীয় হয় এবং স্ত্রীর ইদ্দত এখনো শেষ না হয়, (যেমন তার বাচ্চা প্রসব করা, যদি তালাক অবস্থায় গর্ভবতী থাকে, অথবা তার তিন ঋতু অতিবাহিত হওয়া) তাহলে তার স্ত্রীকে কথার দ্বারাই রুজআত তথা ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব, যেমন বলা : আমি তোমাকে রুজআত করে নিলাম তথা ফিরিয়ে নিলাম অথবা আমি তোমাকে রেখে দিলাম, তাহলে রুজআত হয়ে যাবে, অথবা কোন কাজের দ্বারা রুজআত উদ্দেশ্য করা, যেমন রুজআতের উদ্দেশ্যে সহবাস করা, তাহলেও রুজআত শুদ্ধ।
এ ক্ষেত্রে সুন্নত হচ্ছে রুজআতের জন্য সাক্ষী রাখা, যেমন দু’জন ব্যক্তিকে তার রুজআত সম্পর্কে জানানো আল্লাহ তাআলার বাণী অনুসারে, আল্লাহ তাআলা বলেন :
(فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمْسِكُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ أَوْ فَارِقُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ وَأَشْهِدُوا ذَوَيْ عَدْلٍ مِنْكُمْ ) الطلاق: من الآية2 ،
“অতঃপর যখন তারা তাদের ইদ্দতের শেষ সীমায় পৌঁছবে, তখন তোমরা তাদের ন্যায়ানুগ পন্থায় রেখে দেবে অথবা ন্যায়ানুগ পন্থায় তাদের পরিত্যাগ করবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে ন্যায়পরায়ন দুইজনকে সাক্ষী বানাবে”। তালাক : (২)
আর যদি স্ত্রী এক তালাকের পর অথবা দুই তালাকের পর ইদ্দত শেষ করে ফেলে, তাহলে নতুন করে আকদ করা জরুরী, এ ক্ষেত্রে সে অন্যান্য পুরুষের ন্যায়, মেয়ের অভিভাবক বা স্বয়ং মেয়েকে প্রস্তাব দেবে, যখন মেয়ে ও তার অভিভাবক সম্মত হয় এবং মোহরের প্রতি সন্তুষ্টি পোষণ করে, তখন দুই জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে আকদ সম্পন্ন করতে হবে।
আর যদি তিন তালাক দেয়, তাহলে এ স্ত্রী তার উপর হারাম, যতক্ষণ না শরিয়ত সম্মতভাবে স্ত্রী অন্য স্বামীকে বিয়ে করে এবং তার সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়, অতঃপর তালাক বা মৃত্যুর কারণে তার থেকে আলাদা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন :
( فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ) البقرة/230 ،
“অতএব যদি সে তাকে তালাক দেয় তাহলে সে পুরুষের জন্য হালাল হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ভিন্ন একজন স্বামী সে গ্রহণ না করে”। সূরা বাকারা : (২৩০)
তবে কোন ব্যক্তির সাথে এমনভাবে চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া বৈধ নয় যে, তাকে বিয়ে করে তালাক দিয়ে দেবে, এটা গর্হিত ও কবিরা গুনা, এ বিয়ের কারণে স্ত্রী পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হবে না, বরং হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন।
দেখুন : কিতাব ফতোয়াত তালাক : (১/১৯৫-২১০), শায়ক আব্দুল আজিজ বিন বাজ রহ. রচিত।
মুসলমান মাত্রই যে কোন বিষয়ে জানতে চাই আল্লাহর ফয়সালা, আল্লাহ কুরআনে কি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ব্যাখ্যা কিরূপ দিয়েছেন এবং সাহাবায়ে কেরাম ও তাদের পরবর্তী মনীষীদের বক্তব্য ও মতামত কি ? তাই এখানে তালাক সংক্রান্ত দুইটি আয়াত অনুবাদ ও তাফসিরসহ উল্লেখ করছি, যেন পাঠকবৃন্দ কুরআনের মূল বক্তব্য আত্মস্থ করতে ও যথাযথ বুঝতে সক্ষম হোন।
الطَّلاقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ وَلا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَأْخُذُوا مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلا أَنْ يَخَافَا أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلا تَعْتَدُوهَا وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ (229) فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَنْ يَتَرَاجَعَا إِنْ ظَنَّا أَنْ يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ (230) سورة البقرة.
(২২৯) তালাক দু’বার। অতঃপর বিধি মোতাবেক রেখে দেবে কিংবা সুন্দরভাবে ছেড়ে দেবে। আর তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা তাদেরকে যা দিয়েছ, তা থেকে কিছু নিয়ে নেবে। তবে উভয়ে যদি আশঙ্কা করে যে, আল্লাহর সীমারেখায় তারা অবস্থান করতে পারবে না। সুতরাং তোমরা যদি আশঙ্কা কর যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা কায়েম রাখতে পারবে না তাহলে স্ত্রী যা দিয়ে নিজকে মুক্ত করে নেবে তাতে কোন সমস্যা নেই। এটা আল্লাহর সীমারেখা। সুতরাং তোমরা তা লঙ্ঘন করো না। আর যে আল্লাহর সীমারেখাসমূহ লঙ্ঘন করে, বস্তুত তারাই যালিম। (২৩০) অতএব যদি সে তাকে তালাক দেয় তাহলে সে পুরুষের জন্য হালাল হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ভিন্ন একজন স্বামী সে গ্রহণ না করে। অতঃপর সে (স্বামী) যদি তাকে তালাক দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের অপরাধ হবে না যে, তারা একে অপরের নিকট ফিরে আসবে, যদি দৃঢ় ধারণা রাখে যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা কায়েম রাখতে পারবে। আর এটা আল্লাহর সীমারেখা, তিনি তা এমন সম্প্রদায়ের জন্য স্পষ্ট করে দেন, যারা জানে। সূরা বাকারা : (২২৯-২৩০)
এ আয়াত দু’টির তাফসির :
তাফসির ইব্ন কাসির :
তাফসিরে ইব্ন কাসিরে এর ব্যাখ্যায় বলা হয় : ইসলামের পূর্ব যুগে প্রথা ছিল, স্বামী যত ইচ্ছা স্ত্রীকে তালাক দিত আর ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নিত, ফলে স্ত্রীগণ সংকটপূর্ণ অবস্থায় পতিত হয়েছিল। স্বামী তাদেরকে তালাক দিত এবং ইদ্দত অতিক্রান্ত হওয়ার নিকটবর্তী হতেই ফিরিয়ে নিত, পুনরায় তালাক দিত। কাজেই স্ত্রীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল, ফলে ইসলাম তালাকের সীমা নির্ধারণ করে দেয় যে, এভাবে মাত্র দু’টি তালাক দিতে পারবে, তৃতীয় তালাকের পর ফিরিয়ে নেয়ার আর কোন অধিকার থাকবে না স্বামীর। ‘সুনানে আবু দাউদে’ এ অধ্যায়ে রয়েছে যে, তিন তালাকের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার বিধান রহিত হয়ে গেছে।
‘মুসনাদে ইব্ন আবি হাতিম’ গ্রন্থে রয়েছে : এক ব্যক্তি নিজ স্ত্রীকে বলে : আমি তোমাকে রাখবও না আবার ছেড়েও দেব না। স্ত্রী বলে : কিভাবে ? সে বলে : তোমাকে তালাক দেব এবং ইদ্দত শেষ হওয়ার সময় হলেই ফিরিয়ে নেব, আবার তালাক দেব এবং ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্বেই ফিরিয়ে নেব, এরূপ করতেই থাকব। লোকটির স্ত্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দারবারে গিয়ে এ দুঃখের কথা বর্ণনা করে, তখন এ আয়াত নাযিল হয়। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পর ঐ লোকেরা তালাকের প্রতি লক্ষ্য রাখতে আরম্ভ করে এবং শুধরে যায়। তৃতীয় তালাকের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার স্বামীর কোন অধিকার থাকল না এবং তাদেরকে বলা হল দুই তালাক পর্যন্ত তোমাদের অধিকার রয়েছে, এর মধ্যে সংশোধনের উদ্দেশ্যে তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে ফিরিযে নিতে পারবে, যদি তারা ইদ্দতের মধ্যে থাকে। তোমাদের এও অধিকার রয়েছে যে, তোমরা তাদের ইদ্দত অতিক্রান্ত হতে দেবে, তাদেরকে ফিরিয়ে নেবে না, যেন তারা নতুনভাবে বিয়ের যোগ্য হয়। আর যদি তৃতীয় তালাক দেবার ইচ্ছে কর তবে সৎভাবে তালাক দেবে, তাদেরকে কোন হক নষ্ট করবে না, তাদের উপর অত্যাচার করবে না এবং তাদের কোন ক্ষতি করবে না।
এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করে, হে আল্লাহর রাসূল, এ আয়াতে দুই তালাকের কথা তো বিদ্যমান, কিন্তু তৃতীয় তালাক কোথায় ? তখন তিনি বলেন : أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ অর্থাৎ ‘সৎভাবে পরিত্যাগ করা’। এটাই তিন তালাক। আর যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতানৈক্য বেড়ে যায় এবং স্ত্রী স্বামীর প্রতি সন্তুষ্ট না থাকে ও তার হক আদায় না করে, এরূপ অবস্থায় যদি সে তার স্বামীকে কিছু (ফিদিয়া) প্রদান করত তালাক গ্রহণ করে, তবে তার দেয়া এবং স্বামীর ফিদিয়া নেয়ায় কোন পাপ নেই। এটাও মনে রাখার বিষয় যে, যদি স্ত্রী বিনা কারণে তার স্বীমার নিকট ‘খোলা’ তালাক প্রার্থনা করে তবে সে অত্যন্ত পাপী হবে। ‘জামেউত তিরমিজি’ ও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থে রয়েছে, যে স্ত্রী বিনা কারণে তার স্বামীর নিকট তালাক প্রার্থনা করে তার উপর বেহেশতের সুগন্ধিও হারাম। আর একটি বর্ণনায় রয়েছে, অথচ বেহেশতের সুগন্ধি চল্লিশ বছরের দূরত্ব হতেও এসে থাকে। পূর্বাপর আলেমদের একটি বড় জামাত বলেছেন : ‘খোলা শুধু ঐ অবস্থায় বৈধ যখন অবাধ্যতা ও নাফরমানি স্ত্রীর পক্ষ থেকে হয়, সে সময় স্বামী মুক্তিপণ নিয়ে ঐ স্ত্রীকে পৃথক করে দিতে পারে, যেমন কুরআনের এ আয়াতে রয়েছে, এ ছাড়া অন্য কোন অবস্থায় ‘খোলা’ বৈধ নয়। এমনকি ইমাম মালেক রহ. বলেছেন : ‘যদি স্ত্রীকে কষ্ট দিয়ে এবং তার কিছু হক নষ্ট করে স্ত্রীকে বাধ্য করত স্বামী তার থেকে কিছু গ্রহণ করে, তবে তা ফিরিয়ে দেয়া ওয়াজিব’। ইমাম শাফিয়ি রহ. বলেন : মত বিরোধের সময় যখন কিছু গ্রহণ করে তালাক দেয়া বৈধ, তখন ঐক্যমতের সময় কিছু গ্রহণ করে তালাক দেয়াতে দোষের কোন কারণ নেই।
ইমাম আবু হানিফা রহ. ও তার সাথীদের উক্তি এই যে, যদি অন্যায় ও ত্রুটি স্ত্রীর পক্ষ হতে হয় তবে স্বামী তাকে যা দিয়েছে তা (ফিদিয়া হিসেবে) ফিরিয়ে নেয়া তার জন্যে বৈধ, কিন্তু তার চেয়ে বেশী নেয়া জায়েজ নয়। আর বাড়াবাড়ি যদি পুরুষের পক্ষ থেকে হয়, তবে তার জন্য কোন কিছু গ্রহণ করা বৈধ নয়। ইমাম আহমদ রহ., উবাইদ, ইসহাক ও রাহওয়েহ রহ. বলেন যে, স্বামীর জন্যে তার প্রদত্ত বস্তু হতে অতিরিক্ত নেয়া কোন ক্রমেই বৈধ নয়। “তাফসির ইব্ন কাসির” : সূরা বাকারা আয়াত : (২৯-৩০), সংক্ষিপ্ত অনুবাদ।
তাফসির ইব্ন আবি হাতেম :
الطَّلاقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ وَلا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَأْخُذُوا مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلا أَنْ يَخَافَا أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلا تَعْتَدُوهَا وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ (229) فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَنْ يَتَرَاجَعَا إِنْ ظَنَّا أَنْ يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ (230) سورة البقرة.
الطَّلاقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ {তালাক দু’বার, অতঃপর বিধি মোতাবেক রেখে দেবে কিংবা সুন্দরভাবে ছেড়ে দেবে।} এর ব্যাখ্যায় ইব্ন আব্বাস রাদিআল্লাহু বলেন : ব্যক্তি যখন তার স্ত্রীকে দুই তালাক দেয়, তৃতীয় তালাকের ব্যাপারে তার উচিত আল্লাহকে ভয় করা, হয়তো তাকে সুন্দরভাবে রেখে দেবে, তার সাথে সুন্দর ব্যবহার করবে, অথবা তাকে সুন্দরভাবে পরিত্যাগ করবে, তার অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত কিংবা তার উপর যুলম করবে না। সাহাবি ‘আবু রাজিন’ রাদিআল্লাহ বলেন : এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামের নিকট এসে বলে, হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহ তো বলেছেন : الطَّلاقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ {তালাক দু’বার, অতঃপর বিধি মোতাবেক রেখে দেবে কিংবা সুন্দরভাবে ছেড়ে দেবে।} কিন্তু তৃতীয় তালাক কোথায় ? তিনি বলেন : التَّسْرِيحُ بِإِحْسَانٍ" {সুন্দরভাবে ছেড়ে দেয়া।} মুফাস্সির সুদ্দি বলেন : أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ {অথবা সুন্দরভাবে ছেড়ে দেয়া।} অর্থাৎ তার অধিকার তাকে বুঝিয়ে দেয়া, তাকে কষ্ট ও গালি না দেয়া।
ইকরিমা রহ. ও হাসান রহ. বলেন : {ইসলাম পূর্বে ও ইসলামের প্রাথমিক যুগে} স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের দেয়া মোহরানা ও অন্যান্য সম্পদ ভোগ করত, এতে তারা নিজেদের কোন অপরাধ বোধ করত না, অতঃপর আল্লাহ তাআলা নাযিল করেন, وَلا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَأْخُذُوا مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا {আর তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা তাদেরকে যা দিয়েছ, তা থেকে কিছু নিয়ে নেবে।} এরপর স্ত্রীদের সম্পদ তাদের অনুমতি ও সন্তুষ্টি ব্যতীত স্বামীদের ভক্ষণ করা বৈধ নয়।
فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ {সুতরাং তোমরা যদি আশঙ্কা কর যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা কায়েম রাখতে পারবে না তাহলে স্ত্রী যা দিয়ে নিজেকে মুক্ত করে নেবে তাতে কোন সমস্যা নেই।} এর অর্থ ইব্ন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, অর্থাৎ স্ত্রীর আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করা, স্বামীর প্রতি কর্তব্যে অবহেলা করা ও তার সাথে দুর্ব্যবহার করা, যেমন তাকে বলা : আল্লাহর শপথ আমি তোমার সাথে সদাচারণ করব না, বিছানায় তোমাকে সুযোগ দেব না, তোমার আনুগত্য করব না ইত্যাদি, যদি সে এরূপ করে, তাহলে স্বামীর জন্য বৈধ তার থেকে ফিদিয়া গ্রহণ করে, তাকে পরিত্যাগ করা, তবে তাকে মোহরানা বাবদ যা দেয়া হয়েছিল, তার চেয়ে অধিক গ্রহণ করবে না, আর তার রাস্তা পরিষ্কার করে দেয়া, যদি দুর্ব্যবহার তার {স্ত্রীর) পক্ষ থেকে হয়।
تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلا تَعْتَدُوهَا وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ {এটা আল্লাহর সীমারেখা, সুতরাং তোমরা তা লঙ্ঘন করো না, আর যে আল্লাহর সীমারেখাসমূহ লঙ্ঘন করে, বস্তুত তারাই যালিম।} ইমাম যাহ্হাক রাহিমাহুল্লাহ এর ব্যাখ্যায় বলেন, এ হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্যের সীমা রেখা, তোমরা এর সীমালঙ্ঘন কর না, তিনি বলেন, যদি কেউ এ নিয়ম পরিহার করে তালাক দেয়, সে নিজের উপর যুলম করল।
“তাফসির ইব্ন আবি হাতেম” লেখক : ইব্ন আবি হাতেম রাজি, (মৃ.৩২৭হি.), প্রকাশক : মাকতাবাতু নাজার মুস্তফা আল-বাজ, দেশ : রিয়াদ, মক্কা আল-মুকাররামাহ, প্রকাশকাল : ১৪১৭হি. মোবাতিক ১৯৯৭ই. প্রথম প্রকাশ। সংক্ষিপ্ত অনুবাদ।
তাফসির ইব্ন আবু জামানিন আল-উন্দুলুসি :
الطَّلاقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ وَلا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَأْخُذُوا مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلا أَنْ يَخَافَا أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلا تَعْتَدُوهَا وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ (229) فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَنْ يَتَرَاجَعَا إِنْ ظَنَّا أَنْ يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ (230) سورة البقرة.
الطَّلاقُ مَرَّتَانِ {তালাক দু’বার।} অর্থাৎ যে তালাকের পর স্বামী স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারে, তার সংখ্যা দুইটি। وَلا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَأْخُذُوا مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلا أَنْ يَخَافَا أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ {আর তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা তাদেরকে যা দিয়েছ, তা থেকে কিছু নিয়ে নেবে। তবে উভয়ে যদি আশঙ্কা করে যে, আল্লাহর সীমারেখায় তারা অবস্থান করতে পারবে না।} আল্লাহ তাআলা স্বামী-স্ত্রী উভয়কে নির্দেশ দিয়েছেন, নারীর ব্যাপারে যদি এরূপ ধারণা করা হয় যে, স্বামীর প্রতি তার অনীহা রয়েছে, হয়তো সে স্বামীর অধিকারের ব্যাপারে আল্লাহর নাফরমানি করবে, অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক সে স্বামীর অধিকার আদায় করবে না, অথবা স্বামীর পক্ষ থেকে আশঙ্কা করা হয় যে, সে যদি স্ত্রীকে তালাক না দেয়, হয়তো স্ত্রীর উপর সে সীমালঙ্ঘন করবে, অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক সে স্ত্রীকে রাখবে না।
فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ {সুতরাং তোমরা যদি আশঙ্কা কর যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা কায়েম রাখতে পারবে না তাহলে স্ত্রী যা দিয়ে নিজেকে মুক্ত করে নেবে তাতে কোন সমস্যা নেই।} কাতাদা রহিমাহুল্লাহ বলেন : এখানে কর্তাব্যক্তিদের সম্মোধন করা হয়েছে। تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ {এটা আল্লাহর সীমারেখা।} তালাকের ব্যাপারে এটাই আল্লাহর নীতি ও নির্দেশ। فَلا تَعْتَدُوهَا {সুতরাং তোমরা তা লঙ্ঘন করো না।}
وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ {আর যে আল্লাহর সীমারেখাসমূহ লঙ্ঘন করে, বস্তুত তারাই যালিম।} তারা নিজেদের উপর নিজেরাই অত্যাচারী।
فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَنْ يَتَرَاجَعَا {অতঃপর সে (দ্বিতীয় স্বামী) যদি তাকে তালাক দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের অপরাধ হবে না যে, তারা একে অপরের নিকট ফিরে আসবে} কেউ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন : যদি দ্বিতীয় স্বামী স্ত্রীকে তালাক দেয় অথবা মারা যায়, তাহলে স্ত্রী ও প্রথম স্বামীর পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াতে কোন পাপ নেই, যদি তারা উভয়ে পছন্দ করে।
“তাফসিরুল কুরআনির আজিজ” লেখক : ইব্ন আবি জামনিন আল উন্দুলুসি, (মৃ.৩৯৯হি.), প্রকাশক : আল-ফারুকুল হাদিসিয়াহ, দেশ : মিসর, প্রকাশকাল : ১৪২৩হি. মোতাবিক ২০০২ই. প্রথম প্রকাশ}
মাআলিমুত তানজিল তাফসিরুল বগভি :
الطَّلاقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ وَلا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَأْخُذُوا مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلا أَنْ يَخَافَا أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلا تَعْتَدُوهَا وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ (229) فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَنْ يَتَرَاجَعَا إِنْ ظَنَّا أَنْ يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ (230) سورة البقرة.
فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ {অতঃপর বিধি মোতাবেক রেখে দেবে} অর্থাৎ দ্বিতীয়বার ফিরিয়ে নেয়ার পর যদি স্বামী স্ত্রীকে রাখতে চায়, তাহলে সুন্দরভাবে ও সদাচারণের সাথে রাখবে, অথবা أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ {কিংবা সুন্দরভাবে ছেড়ে দেবে।} অর্থাৎ তালাকের পর তাকে পরিত্যাগ করবে, যেন তার ইদ্দত শেষ হয়ে যায়। কেউ বলেছেন : এর দ্বারা উদ্দেশ্যে তিন তালাক।
فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ {তাহলে স্ত্রী যা দিয়ে নিজেকে মুক্ত করে নেবে তাতে তাদের কোন সমস্যা নেই।} ফাররা বলেছেন : এখানে উদ্দেশ্য শুধু পুরুষ স্ত্রী নয়, তবে উভয়ের সম্পর্কের কারণে তাদেরকে এক সাথে উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন আল্লাহর বাণী نَسِيَا حُوتَهُمَا {তারা উভয়ে তাদের মাছ ভুলে গিয়েছিল}-তে একসাথে উল্লেখ করা হয়েছে মুসা ও তার সাথীকে, অথচ ভুলেছিল শুধু মুসা আলাইহিস সালামের সাথী, মুসা আলাইহিস সালাম নন।
সাঈদ ইব্নুল মুসায়্যিব রহ. বলেছেন : স্বামী যা দিয়েছে {মোহরানা হিসেবে}, তার চেয়ে অধিক নেবে না {খোলা অবস্থায়}, বরং তার দেয়া অংশ থেকে কিছু ছেড়ে দেবে, আর স্বাভাবিক হালাতেও খোলা বৈধ, তবে এটা মাকরুহ, কারণ এর মাধ্যমে কোন কারণ ছাড়াই একটি সম্পর্ক বিনষ্ট করা হয়। ইব্ন ওমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : "إِنَّ مِنْ أَبْغَضِ الْحَلالِ إِلَى اللَّهِ الطَّلاقَ" আল্লাহর নিকট সর্ব নিকৃষ্ট হালাল হচ্ছে তালাক।
সাওবান রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
"أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا الطَّلاقَ فِي غَيْرِ مَا بَأْسٍ، فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الْجَنَّةِ"
“যে কোন নারী তার স্বামীর নিকট বিনা কারণে তালাক প্রার্থনা করল, তার উপর জান্নাতের সুগন্ধি হারাম”।
আল্লাহ তাআলার বাণী : تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ {এটা আল্লাহর সীমারেখা।} এ হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ ও নিষেধ এবং আল্লাহর বিধানের সীমানা, যার লঙ্ঘ থেকে শরিয়ত তোমাদের নিষেধ করেছে, فَلا تَعْتَدُوهَا {সুতরাং তোমরা তা লঙ্ঘন করো না।}
فَإِنْ طَلَّقَهَا {অতএব যদি সে তাকে তালাক দেয়।} অর্থাৎ প্রথম স্বামীর তৃতীয় তালাক। فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَنْ يَتَرَاجَعَا {অতঃপর সে (দ্বিতীয় স্বামী) যদি তাকে তালাক দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের অপরাধ হবে না যে, তারা একে অপরের নিকট ফিরে আসবে।} অর্থাৎ দ্বিতীয় স্বামী যদি সহবাস করার পর তাকে তালাক দেয়, তাহলে স্ত্রী ও প্রথম স্বামীর কোন পাপ হবে না, নতুন বিয়ের মাধ্যমে পুনরায় একত্রিত হওয়া, যদি তারা দৃঢ় বিশ্বাসী হয় যে, তারা উভয়ে সৎভাব ও সদাচারণের সাথে সংসার করতে পারবে। মুজাহিদ বলেন : যদি তারা মনে করে যে, তাদের এ বিয়ে প্রতারণামূলক নয়, অর্থাৎ হিল্লার পদ্ধিতে নয়। এ অভিমত ব্যক্তি করেছেন সুফিয়ান সাওরি, আওজায়ি, মালেক, আহমদ ও ইসহাক প্রমুখগণ, তারা বলেন : তিন তালাক প্রাপ্তা নারী যদি দ্বিতীয় স্বামীকে এ উদ্দেশ্যে বিয়ে করে যে, সে তাকে প্রথম স্বামীর জন্য হালাল করে দেবে, তাহলে এ বিয়ে বাতিল।
“মাআলিমুত তানজিল তাফসিরুল বগভি”, লেখক : আলহুসাইন ইব্ন মাসউদ আল-বগভি, (মৃ.৫১৬), প্রকাশক : দারুল মারেফা, দেশ : বউরুত, প্রকাশকাল : ১৪০৭হি. মোতাবিক ১৯৮৭ই. দ্বিতীয় প্রকাশ।
আল-ওয়াসিত ফি তাফসিরিল কুরআনিল মাজিদ :
الطَّلاقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ وَلا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَأْخُذُوا مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلا أَنْ يَخَافَا أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلا تَعْتَدُوهَا وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ (229) فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَنْ يَتَرَاجَعَا إِنْ ظَنَّا أَنْ يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ (230) سورة البقرة.
الطَّلاقُ مَرَّتَانِ {তালাক দু’বার।} এর মাধ্যমে তালাকের সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে এবং তা তিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। এ আয়াতে দুই তালাকের উল্লেখ করা হয়েছে, আর তৃতীয় তালাক উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহর পরবর্তী বাণীতে অর্থাৎ فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ {অতএব যদি সে তাকে তালাক দেয় তাহলে সে পুরুষের জন্য হালাল হবে না।} الطَّلاقُ مَرَّتَانِ {তালাক দু’বার।} এ আয়াত সংক্ষিপ্ত, কারণ এর পূর্ণ অর্থ হচ্ছে, যে তালাকের পর স্বামী স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারবে তার সংখ্যা দুইটি, আরفَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ {অতঃপর বিধি মোতাবেক রেখে দেবে।} এর অর্থ হচ্ছে, যদি সে দুই তালাকের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়, তাহলে স্ত্রীকে সৎভাবে রাখা তার উপর ওয়াজিব, অর্থাৎ শরিয়ত নির্ধারিত তার হক তাকে পুরোপুরি আদায় করা, অথবা أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ {কিংবা সুন্দরভাবে ছেড়ে দেবে।} এর অর্থ আতা, সুদ্দি ও যাহ্হাক বলেন, ইদ্দত অবস্থায় নারীকে ত্যাগ করা, যেন ইদ্দত শেষ করে সে স্বামী থেকে বায়েনা ও আলাদা হয়ে যায়।
আল্লাহ তাআলার বাণী وَلا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَأْخُذُوا مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا {আর তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা তাদেরকে যা দিয়েছ, তা থেকে কিছু নিয়ে নেবে।} অর্থাৎ স্বামীর জন্য বৈধ নয় স্ত্রীকে দেয়া মোহর থেকে কোন কিছু গ্রহণ করা খোলা ব্যতীত, অর্থাৎ খোলার সময় নেয়া বৈধ।
إِلا أَنْ يَخَافَا أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ {তবে উভয়ে যদি আশঙ্কা করে যে, আল্লাহর সীমারেখায় তারা অবস্থান করতে পারবে না।} এ আয়াতের অর্থ যদি নারী আশঙ্কা করে যে, স্বামীর প্রতি অনীহা তাকে স্বামীর ব্যাপারে আল্লাহর অবাধ্য করে ফেলবে, আর স্বামী আশঙ্কা করে যে, স্ত্রী যদি তার আনুগত্য না করে, তাহলে সে স্ত্রীর উপর সীমালঙ্ঘন করতে পারে, তাহলে তার জন্য বৈধ আছে ফিদিয়া গ্রহণ করা, যদি স্ত্রী তাকে এ জন্য অনুরোধ করে।
فَإِنْ طَلَّقَهَا {অতএব যদি সে তাকে তালাক দেয়।} অর্থাৎ দুই তালাক দানকারী স্বামী যদি পুনরায় তাকে (তৃতীয়) তালাক দেয়, فَلا تَحِلُّ لَهُ {তাহলে সে তার জন্য হালাল হবে না} من بعد তিন তালাকের পর থেকে, حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ যতক্ষণ না তাকে সে ব্যতীত অন্য একজন স্বামী বিয়ে না করে। এখানে উল্লেখিত বিয়ের মধ্যে আকদ ও সহবাস উভয় বিদ্যমান, অর্থাৎ দ্বিতীয় স্বামী যতক্ষণ না তার সাথে সহবাস করে, প্রথম স্বামীর জন্য সে হালাল হবে না। আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রিফাআর স্ত্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলে : আমি রিফাআর নিকট ছিলাম, সে আমাকে তিন তালাক দিয়েছে, তারপর আমি আব্দুর রহমান ইব্ন জুবায়েরকে বিয়ে করি, কিন্তু তার যা রয়েছে, তা শুধু কাপড়ের আঁচলের ন্যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথা শোনে হাসলেন, এবং বললেন : তুমি কি রিফাআর নিকট ফিরে যেতে যাও ? না, যেতে পারবে না, যতক্ষণ না তুমি তার সহবাসের স্বাদ গ্রহণ কর এবং সে তোমার সহবাসের স্বাদ গ্রহণ করে। তখন আবু বকর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথেই ছিল, আর খালেদ ইব্ন সায়িদ ইব্ন আস দরজায় দাঁড়িয়ে অনুমতির অপেক্ষা করছেন, তিনি আবু বকরকে ডেকে বলেন : আপনি কি শুনছেন না, এ মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে কিসব কথার উল্লেখ করছে?
وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ {আর এটা আল্লাহর সীমারেখা, তিনি তা এমন সম্প্রদায়ের জন্য স্পষ্ট করে দেন, যারা জানে।} কুরআন আলেমদের কথা উল্লেখ করেছে, কারণ তারাই আয়াতের বর্ণনা দ্বারা উপকৃত হয়।
“আল ওয়াসিত ফি তাফসিরিল কুরআনিল মাজিদ”, লেখক : আল-ওয়াহিদি, (মৃ.৪৬৮), প্রকাশক : দারুল কিতাবুল ইলমিয়াহ, দেশ : বউরুত, প্রথম প্রকাশ}
সমাপ্ত
সংকলন : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী