Probondo

Kitab


আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের মর্যাদা


আমাদের হৃদয়ে মহান আল্লাহর প্রতি যথার্থ ভালোবাসা সৃষ্টি হবে না যদি আমরা তার সম্পর্কে জানতে না পরি। আমরা তাঁকে যথার্থভাবে ভয় করতে পারব না যদি আমরা তাঁকে না চিনি। তার ইবাদতও সঠিকভাবে করত সক্ষম হব না যদি তাঁর পরিচয় লাভ করতে ব্যর্থ হই। আমরা তাঁর আদেশ-নিষেধের যথার্থতাও বুঝতে ব্যর্থ হব তাঁর সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাবে। আর সুমহান আল্লাহ তায়ালার পরিচয় লাভের জন্য তাঁর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করার কোন বিকল্প নাই। তাই আমরা তাঁর পরিচয় লাভের উদ্দেশ্যে আমাদের মানবীয় সাধ্যানুপাতে যত বেশী চেষ্টা ও সাধনা করব, সময় ও শ্রম ব্যয় করব তত বেশী সুন্দর, অর্থবহ ও সাফল্য মণ্ডিত হবে আমাদের ইহ ও পারলৌকিক জীবন ইনশাআল্লাহ।
১) আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা মহান আল্লাহর পরিচয় লাভের সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম:
উবাই ইবনে কা’ব রা. হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে মুশরিকরা এসে বলল, হে মুহাম্মদ, আপনি আমাদেরকে আপনার রবের বংশ পরিচয় দিন। তখন আল্লাহ তায়ালা নাজিল করলেন:
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ اللَّهُ الصَّمَدُ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
“(হে নবী) আপনি বলে দিন, তিনি আল্লাহ একক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।” (মুসনাদ আহমদ, তিরমিযী)
২) আল্লাহর নামও গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞানার্জন জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম:
আবু হুরায়রা রা., হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِنَّ لِلَّهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً إِلا وَاحِدًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ
“আল্লাহর এমন নিরানব্বইটি-এক কম একশটি নাম-রয়েছে, যে ব্যক্তি সেগুলো সংরক্ষণ করবে (তথা মুখস্ত করার পাশাপাশি সেগুলো বুঝে আমল করবে) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
৩) আল্লাহর নাম ও গুণাবলী দুয়া কবুলের মাধ্যম:
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَلِلَّهِ الأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا 
“আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। তোমরা সে সব নাম ধরে তাঁর নিকট দুয়া কর।” (সূরা আরাফ: ১৮০)
বুরাইদা ইবনুল হুসাইব রা. হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে এই দুয়াটি বলতে শুনলেন,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ أَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
অর্থ: “হে আল্লাহ আমি এই ওসিলায় আপনার নিকট প্রার্থনা করছি যে, আমি সাক্ষ্য দেই, আল্লাহ আপনি ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নাই, আপনি একক এবং মুখাপেক্ষী হীন। যিনি কাউকে জন্ম দেন নি, কারও নিকট থেকে জন্ম নেন নি। যার সমকক্ষ কেউ নেই।” তখন তিনি বললেন:
لَقَدْ سَأَلْتَ اللَّهَ بِالِاسْمِ الَّذِي إِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى وَإِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ
“তুমি এমন নাম ধরে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেছ, যে নাম ধরে প্রর্থনা করলে তিনি দান করেন এবং যে নাম ধরে ডাকলে তিনি ডাকে সাড়া দেন।” (তিরমিযী, হা/৩৪৭৫, আবু দাঊদ হা/১৪৯৩, ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৫৭। আল্লামা আলবানী রহ. এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।)
৪) আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করলে তা আমাদের জীবনে বিরাট প্রভাব সৃষ্টি করে:
যখন আমরা আল্লাহ নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে জানতে পারব তখন তা আমাদের ইবাদত-বন্দেগী, বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা, আচার-আচরণে তার প্রভাব সৃষ্টি হবে। উদাহরণ স্বরূপ, যখন আমরা জানব যে, আল্লাহর নাম ‘আর রহমান’ (পরম করুণাময়) তখন হৃদয় পটে তাঁর রহমতের প্রত্যাশা জাগ্রত হবে।
যখন জানতে পরব যে, তাঁর একটি নাম ‘আস সামী’ (সর্বশ্রোতা) ও ‘আল বাসীর’ (সর্বদ্রষ্টা) তখন আমাদের সতর্কতার সাথে কাজ করতে হবে বা কথাবার্তা বলতে হবে। কারণ, একান্ত নিভৃতে বা অতি সঙ্গোপনে কোন কাজ করলে বা কোন কথা বললেও তিনি তা জেনে যাবেন। এভাবে প্রত্যেকটি নামের তাৎপর্য আমাদের জীবনে প্রভাব সৃষ্টি করে।
আল্লাহর নাম কি নিরানব্বইটিতে সীমাবদ্ধ?
আল্লাহর নাম নিরানব্বই সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়। বরং তাঁর নামের প্রকৃত সংখ্যা তিনি ছাড়া কেউ জানে না। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিম্নোক্ত দুয়াটি:
أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ ، أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ ، أَوْ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ
“আমি আপনার সেই সকল নাম ধরে প্রার্থনা করছি, যে নামগুলো আপনি নিজেই নিজের জন্য নির্ধারণ করেছেন। অথবা সৃষ্ট জগতের কাউকে শিক্ষা দিয়েছেন, অথবা আপনার কিতাবে নাজিল করেছেন অথবা আপনার নিজের কাছেই ইলমে গায়ব (অদৃশ্য জ্ঞান)এ সংরক্ষিত রেখে দিয়েছেন।” (মুসনাদ আহমদ, হা/৩৭০৪, সিলসিলা সহীহাহ, আলবানী)
ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন, “এতে প্রমাণিত হয়, আল্লাহ তায়ালার নাম নিরানব্বিইটির অধিক।” (মাজমু ফাতাওয়া ৬ খণ্ড ৩৭৪ পৃষ্ঠা)
আর যে হাদীসে নিরানব্বইটি নামের কথা বলা হয়েছে সেটির ব্যাখ্যায় ইমাম নওবী রহ. বলেন,
اتَّفَقَ الْعُلَمَاء عَلَى أَنَّ هَذَا الْحَدِيث لَيْسَ فِيهِ حَصْر لأَسْمَائِهِ سُبْحَانه وَتَعَالَى , فَلَيْسَ مَعْنَاهُ : أَنَّهُ لَيْسَ لَهُ أَسْمَاء غَيْر هَذِهِ التِّسْعَة وَالتِّسْعِينَ , وَإِنَّمَا مَقْصُود الْحَدِيث أَنَّ هَذِهِ التِّسْعَة وَالتِّسْعِينَ مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّة , فَالْمُرَاد الإِخْبَار عَنْ دُخُول الْجَنَّة بِإِحْصَائِهَا لا الإِخْبَار بِحَصْرِ الأَسْمَاء اهـ
“আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, উক্ত হাদীসে এ কথা নেই যে, আল্লাহর নাম নিরানব্বইটির মধ্যে সীমাবদ্ধ। হাদীসের এ অর্থ নয় যে, এই নিরানব্বইটি ছাড়া আল্লাহর আর কোন নাম নেই। বরং এ কথার উদ্দেশ্য হল, যে ব্যক্তি এই নিরানব্বইটি নাম সংরক্ষণ করবে (তথা মুখস্ত করার পাশাপাশি বুঝে আমল করবে) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অর্থাৎ এখানে এ নামগুলো সংরক্ষণকারীর জন্য জান্নাতে প্রবেশের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। নামের সংখ্যার সীমাবদ্ধতার কথা বলা হয় নি।” (শরহে সহীহ মুসলিম)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব