লেখক : মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক
সম্পাদক: নুমান বিন আবুল বাশার
সম্পাদক: নুমান বিন আবুল বাশার
শাওয়াল, যিলকদ ও জিলহজ এ তিনটি হল হজের মাস। হজের মাসসমূহে পৃথকভাবে প্রথমে উমরা ও পরে হজ আদায় করাকে তামাত্তু হজ বলে। অর্থাৎ ১ লা শাওয়াল থেকে উকুফে আরাফার পূর্বে (৯ জিলহজ), যেকোনো মুহূর্তে উমরা আদায় করে হালাল হয়ে যাওয়া ও উকুফে আরাফার পূর্বে নতুন করে হজের এহরাম বাঁধা। এবং হজের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করা। যারা হাদী সঙ্গে করে মক্কায় গমন করে না—বর্তমানে বহিরাগত হাজিদের কেউই হাদীর পশু সঙ্গে নিয়ে আসে না—তাদের জন্য তামাত্তু হজই উত্তম। কারও কারও মতে সর্বাবস্থায় তামাত্তু হজ উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিদায় হজের সময় তাঁর সঙ্গে থাকা সাহাবাদের মধ্যে যারা হাদীর জন্তু সঙ্গে নিয়ে আসেননি তাদের সবাইকে তামাত্তু করার পরামর্শ দিয়েছেন, এবং নিজেও এই বলে কামনা ব্যক্ত করেছেন যে, যদি এ বিষয়টি পূর্বে প্রতীয়মান হত তাহলে হাদীর জন্তু সঙ্গে আনতাম না, আর যদি হাদী আমার সাথে না থাকত, তবে হালাল হয়ে যেতাম।[1]
তামাত্তু হজ তিনভাবে আদায় করা যায়
ক) মীকাত থেকে উমরার জন্য এহরাম বেঁধে মক্কায় গিয়ে তাওয়াফ সাঈ করে মাথার চুল হলক অথবা কসর করে হালাল হয়ে যাওয়া ও হজ পর্যন্ত মক্কাতেই অবস্থান করা। ৮ জিলহজ নতুনভাবে হজের এহরাম বেঁধে হজের কার্যক্রম সম্পাদন করা।
খ) মীকাত থেকে উমরার নিয়তে এহরাম বেঁধে মক্কা গমন করা ও উমরার কার্যক্রম—তাওয়াফ, সাঈ হলক-কসর—সম্পাদন করে হালাল হয়ে যাওয়া। হজের পূর্বেই যিয়ারতে মদিনা সেরে নেয়া ও মদিনা থেকে মক্কায় আসার পথে আবয়ারে আলী নামক জায়গা থেকে উমরার নিয়তে এহরাম বেঁধে মক্কায় আসা। উমরা আদায় করে হালাল হয়ে যাওয়া, ৮ জিলহজ হজের জন্য নতুনভাবে এহরাম বেঁধে হজ আদায় করা।
গ) এহরাম না বেঁধে সরাসরি মদিনা গমন করা। যিয়ারতে মদিনা শেষ করে মক্কায় আসার পথে আবয়ারে আলী নামক জায়গা থেকে উমরার নিয়তে এহরাম বাঁধা ও মক্কায় এসে তাওয়াফ সাঈ হলক-কসর করে হালাল হয়ে যাওয়া, ও ৮ জিলহজ হজের জন্য নতুন করে এহরাম বাঁধা।
কেরান হজ
উমরার সাথে যুক্ত করে একই এহরামে উমরা ও হজ আদায় করাকে কেরান হজ বলে। কেরান হজ দু’ভাবে আদায় করা যায়।
ক) মীকাত থেকে এহরাম বাধার সময় হজ ও উমরা উভয়টার নিয়ত করে এহরাম বাঁধা। মক্কায় পৌঁছে প্রথমে উমরা আদায় করা ও এহরাম অবস্থায় মক্কায় অবস্থান করা। হজের সময় হলে একই এহরামে মিনা-আরাফায় গমন ও হজের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা।
খ) মীকাত থেকে শুধু উমরার নিয়তে এহরাম বাঁধা। পবিত্র মক্কায় পৌঁছার পর উমরার তাওয়াফ শুরু করার পূর্বে হজের নিয়ত উমরার সাথে যুক্ত করে নেয়া। উমরার তাওয়াফ-সাঈ শেষ করে, এহরাম অবস্থায় হজের অপেক্ষায় থাকা ও ৮ জিলহজ একই এহরামে মিনায় গমন ও পরবর্তী কার্যক্রম সম্পাদন করা।
ইফরাদ হজ
হজের মাসগুলোয় উমরা না করে শুধু হজ করাকে ইফরাদ হজ বলে। এ ক্ষেত্রে মীকাত থেকে শুধু হজের নিয়তে এহরাম বাঁধতে হয়। মক্কায় পৌঁছে তাওয়াফে কুদুম (আগমনি তাওয়াফ) করা। ইচ্ছা হলে এ তাওয়াফের পর সাঈও করা যায়। সে ক্ষেত্রে হজের ফরজ-তাওয়াফের পর আর সাঈ করতে হবে না। তাওয়াফে কুদুমের পর এহরাম অবস্থায় মক্কায় অবস্থান করা। ৮ জিলহজ একই এহরামে হজের কার্যক্রম সম্পাদনের উদ্দেশ্যে মিনার দিকে রওয়ানা হওয়া। ইফরাদ হজকারীকে হাদী জবেহ করতে হয় না। তাই ১০ জিলহজ কঙ্কর নিক্ষেপের পর মাথা মুন্ডন করে ইফরাদ হজকারী প্রাথমিকভাবে হালাল হয়ে যেতে পারে।
তথ্যসূত্র :
[1] – لو استقبلت من أمري ما استدبرت ما أهديت ولولا أن معي الهدي لأحللت (বোখারি : হাদিস নং ১৬৬০) এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে : لو ظهر لي هذا الرأي الذي رأيته الآن لأمرتكم به في أول الأمر وابتداء خروجي – অর্থ্যাৎ এখন যে অভিমত ব্যক্ত করলাম তা যদি পূর্বে প্রতীয়মান হত, তাহলে আমি শুরুতেই যাত্রা আরম্ভ করার সময় তোমাদেরকে এরূপ করার নির্দেশ দিতাম।