Probondo

Kitab


দুরন্ত সাহসের এক অনন্য কাহিনী

দুরন্ত সাহসের এক অনন্য কাহিনী

সাহসিকতা প্রত্যেক  মানুষের একটি মৌলিক গুণ। এ সাহসিকতা ভাল কাজে ব্যবহার করলে সুনাম হয়। আর খারাপ  কাজে ব্যবহার করলে বদনাম হয়। অন্যায়কারীর সামনে সত্য কথা বলে তার অন্যায়ের  প্রতিবাদ করা প্রশংসনীয় কাজ। রাসূলুল­াহ  (ছাঃ) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম জিহাদ হ’ল অত্যাচারী বাদশাহর নিকট হক কথা বলা’ (আবূদাউদ হা/৪৩৪৪; তিরমিযী হা/২১৭৪; মিশকাত  হা/৩৭০৫)। যুগে যুগে মহান ব্যক্তিগণ এই সাহসিকতার  দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাদের মধ্যে তাবেঈ ত্বাউস ইবনু কায়সান (রহঃ) অন্যতম।
ইসলামের পঞ্চম খলীফা হিসাবে খ্যাত ওমর ইবনু  আব্দুল আযীয (রহঃ)-এর আমলে একজন বিখ্যাত তাবেঈ ছিলেন, যার নাম ত্বাউস। তাঁর  বংশক্রম হ’ল আবু আব্দির রহমান ত্বাউস ইবনু কায়সান আল-খাওলানী আল-হামাদানী  আল-ইয়ামানী। তিনি একজন দক্ষ ও বিজ্ঞ ফক্বীহ ছিলেন। তিনি ইবনু আববাস, আবু হুরায়রাহ  (রাঃ) সহ অন্যান্য ছাহাবীগণের কাছ থেকে হাদীছ শুনেছেন। মুজাহিদ, আমর ইবনু দীনার সহ  অনেকে তার নিকট থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। ওমর ইবনু আব্দুল আযীয যখন খেলাফতের  দায়িত্ব গ্রহণ করলেন তখন ত্বাউস (রহঃ) তার কাছে পত্র লিখে বললেন, আপনি যদি চান যে,  আপনার রাষ্ট্র ভালভাবে পরিচালিত হোক, তাহ’লে আপনি ভাল লোকদেরকে রাষ্ট্রীয় কাজে  নিযুক্ত করুন। তখন ওমর ইবনু আব্দুল আযীয বলেন, আমার উপদেশ গ্রহণের জন্য তার এ কথাই  যথেষ্ট। তিনি ১০৬ মতান্তরে ১০৪ হিজরী সনে মক্কায় ইয়াওমুত তারবিয়ার একদিন পূর্বে  মৃত্যুবরণ করেন। আব্দুল্লাহ ইবনু হাসান ইবনে আলী তাঁর জানাযার খাট বহন করেন এবং  খলীফা হিশাম ইবনু আব্দিল মালেক তাঁর জানাযায় অংশগ্রহণ করেন।
একদা খলীফা হিশাম বিন  আব্দুল মালেক হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় আসেন। তখন তিনি মক্কাবাসীকে বললেন, এ  সময়ে কি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কোন ছাহাবী বেঁচে আছেন? বলা হ’ল, হে আমীরুল মুমিনীন!  এতদিনে ছাহাবায়ে কেরাম মৃত্যুবরণ করেছেন। তখন তিনি বললেন, কোন তাবেঈ বেঁচে আছে কি?  এসময় ত্বাউস ইবনু কায়সান ইয়ামানী (রহঃ) মক্কায় ছিলেন। প্রশাসনের লোকেরা গিয়ে তাঁকে  খলীফার নিকটে নিয়ে আসল। তিনি খলীফার নিকটে প্রবেশ করে তাঁর জুতা কার্পেটের  পার্শ্বে খুলে রাখলেন। অতঃপর আস-সালামু আলাইকুম বলে খলীফার অনুমতি ব্যতীত তাঁর  পার্শ্বে গিয়ে বসলেন। এরপর বললেন, হে হিশাম! আপনি কেমন আছেন? ত্বাউস (রহঃ)-এর  আচরণে হিশাম কঠিনভাবে রেগে গেলেন এবং তাঁকে হত্যা করার মনোভাব প্রকাশ করলেন। তখন তাকে  বলা হ’ল, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি পবিত্র হারামে অবস্থান করছেন। আর আল্লাহ এবং  তাঁর রাসূল (ছাঃ) হারামের মধ্যে সব ধরনের হত্যাকান্ড নিষিদ্ধ করেছেন। অতএব এটা  সম্ভব নয়। হিশাম বললেন, হে ত্বাউস! এ কাজ করার সাহস তুমি কোথায় পেলে? তিনি বললেন,  আমি তো কোন অপরাধ করিনি। একথা শুনে খলীফা হিশামের রাগ আরও বৃদ্ধি পেল। তিনি বললেন,  তোমার প্রথম অপরাধ তুমি কার্পেটের পার্শ্বে তোমার জুতা খুলে রেখেছ। দ্বিতীয় অপরাধ  তুমি আমাকে আমীরুল মুমিনীন বলে সালাম দেওনি এবং আমাকে আমার উপনামে না ডেকে, নাম  ধরে ডেকেছ। তারপর আমার অনুমতি ব্যতীত আমার পার্শ্বে এসে বসেছ। সর্বোপরি তুমি বলেছ,  হে হিশাম! আপনি কেমন আছেন? তখন ত্বাউস (রহঃ) উত্তরে বললেন, হ্যাঁ আমি আপনার নিকটে  আসার আগে আমার জুতা খুলে কার্পেটের পাশে রেখেছি। আমি তো প্রতিদিন পাঁচবার আমার  প্রভুর ডাকে সাড়া দেয়ার সময় জুতা খুলে রাখি, তিনি তো কখনও আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হন  না এবং আমার প্রতি রাগও করেন না। আপনি বলেছেন, আমি আপনাকে আমীরুল মুমিনীন বলে  সালাম দেইনি। এর কারণ সমস্ত মানুষ আপনার খেলাফতে সন্তুষ্ট নয় এবং সবাই আপনাকে  আমীরুল মুমিনীন হিসাবে মানেও না। তাই আমি আমীরুল মুমিনীন বললে তাতে মিথ্যার  সম্ভাবনা রয়েছে। আপনার অপর অভিযোগ, আমি আপনাকে উপনামে আহবান করিনি বরং আপনার নাম  ধরে ডেকেছি। এর কারণ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীগণকে তাদের স্ব স্ব নামে ডেকেছেন যেমন-  ‘হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে খলীফা নিযুক্ত করেছি’ (ছোয়াদ ৩৮/২৬)। ‘হে ইয়াহইয়া (মারইয়াম ১৯/১২), হে ঈসা (ইমরান  ৩/৫৫)! ইত্যাদি। আর তিনি তাঁর শত্রুদের উপনামে ডেকেছেন। যেমন  তিনি বলেন, ‘ধ্বংস হউক আবু লাহাবের দু’হস্ত এবং সে নিজেও’ (লাহাব ১১১/০১)
আমি আপনার অনুমতি ব্যতীত  আপনার পার্শ্বে বসেছি। কারণ আমি আমীরুল মুমিনীন আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ)-কে  বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, তুমি যদি কোন জাহান্নামীকে দেখতে চাও, তাহ’লে ঐ ব্যক্তির  দিকে তাকাও, যে বসে আছে, অথচ তার আশে-পাশে লোকেরা তার সম্মানে দাঁড়িয়ে আছে। তাই  আমি না দাঁড়িয়ে বসে পড়েছি। খলীফা হিশাম বিন আব্দুল মালেক তখন লা-জওয়াব হয়ে গিয়ে  রাগ দমন করলেন। কিছুক্ষণ পর বললেন, হে ত্বাউস! আমাকে উপদেশ দাও। ত্বাউস (রহঃ)  বললেন, আমি আমীরুল মুমিনীন আলী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, জাহান্নামে  পাহাড়ের চূড়ার ন্যায় লম্বা লম্বা সাপ হবে এবং খচ্চরের মত বড় বড় বিচ্ছু হবে যা  প্রজাদের প্রতি অত্যাচারী শাসকদেরকে দংশন করতে থাকবে। অতঃপর ত্বাউস (রহঃ) সেখান  থেকে উঠে চলে গেলেন (ইবনু  খাল্লিকান, ওয়াফায়াতুল আ‘ইয়ান ২/৫০৯-৫১০)


————
– আব্দুর রহীম