উত্তর:
আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।
এক:
প্রিয় ভাই, আপনি এ বিদআতটি পরিহার করে উত্তম কাজটি করেছেন যে বিদআতটি অভ্যাসের মত মানুষের মাঝে বিস্তার লাভ করেছে। যারা আপনাকে নবীর অনুসরণের ঘাটতি উল্লেখ করে অপবাদ দিল অথবা ইসলামী আদর্শের উপর আপনার অবিচলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলল আপনি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করার দরকার নেই। এমন কোন রাসূল নেই যাঁর সাথে লোকেরা তিরস্কার করেনি বা তাঁর বিবেক-বুদ্ধি ও দ্বীনদারির উপর অপবাদ দেয়নি। আল্লাহ তাআলা বলেন: “এমনিভাবে, তাদের পূর্ববর্তীদের কাছে যখনই কোন রাসূল আগমন করেছে, তারা বলেছে যাদুকর কিংবা উন্মাদ।”[সূরা যারিয়াত, আয়াত: ৫২] নবীদের জীবনে আপনার জন্য উত্তম আদর্শ। সুতরাং আপনি যে কষ্ট পাচ্ছেন এতে ধৈর্য ধারণ করুন এবং আল্লাহর কাছে সওয়াবের প্রত্যাশা করুন।
দুই:
আপনার জন্য নসিহত হচ্ছে- আপনি তাদের সাথে কোন আলোচনা-পর্যালোচনা, তর্ক-বিতর্ক এড়িয়ে চলবেন। যদি এদের মধ্যে জাগ্রত বিবেকের কেউ থাকে যে কথা শুনে ও বুঝতে চেষ্টা করে তাহলে তার সাথে আলোচনা করতে পারেন। বাছাই করে এ ধরণের ব্যক্তিদেরকে আপনি মিলাদের স্বরূপ, এর হুকুম, এটি সঠিক না হওয়ার দলিল জানাতে পারেন। তাদের কাছে আপনি নবীকে অনুসরণ করার মর্যাদা ও বিদআত প্রচলন করার খারাপ দিকটি তুলে ধরতে পারেন। যদি আপনি এমন কাউকে দেখেন তাহলে তাদের সাথে নিম্নোক্ত পন্থায় সংলাপ করতে পারেন এবং তাদেরকে নসিহত করতে পারেন।
১. তারা যেখানে শেষ করেছে আমরা সেখান থেকে শুরু করব। তারা আপনাকে বলেছে: আপনার ইসলাম নতুন ইসলাম। আমরা বলব: কোনটা আগে শুরু হয়েছে- মিলাদ করা; নাকি মিলাদ না করা? নিঃসন্দেহে প্রত্যেক ন্যায়বান ও বিবেকবান ব্যক্তির উত্তর হবে: যারা মিলাদ পালন করে না তারাই আগে। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন এবং তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম উবাইদি যুগ পর্যন্ত মিলাদ করেনি। উবাইদিদের পর মিলাদ করা শুরু হয়েছে। সুতরাং কার ইসলাম নতুন?!
২. আমরা যদি দেখি- কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বেশি ভালবাসে? সাহাবায়ে কেরাম; নাকি তাদের পরবর্তী যামানার লোকেরা? নিঃসন্দেহে প্রত্যেক বিবেকবান লোকের জবাব হবে: সাহাবায়ে কেরাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বেশি ভালবেসেছে এবং বেশি সম্মান দিয়েছে। তারা কি মিলাদ পালন করেছেন?! মিলাদপালনকারী এ লোকদের পক্ষে কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসার ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামের সাথে পাল্লা দেয়া সম্ভব?!
৩. আমরা যদি প্রশ্ন তুলি: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসার অর্থ কী? প্রত্যেক বিবেকবান ও ন্যায়বান ব্যক্তির মতে, নবীর আদর্শের অনুসরণ ও তাঁর প্রদর্শিত পথে চলা। যদি মিলাদপালনকারী এ লোকগুলো তাদের নবীর আদর্শ আঁকড়ে ধরত এবং তাঁকে অনুকরণ করে পথ চলত তাহলে রাসূলের প্রেমিক সাহাবায়ে কেরাম ও নবীর অনুসারীগণ যা করেছেন এদের জন্যেও তা তা করা-ই যথেষ্ট হত এবং তারা বুঝতে পারত যে, পূর্ববর্তীদের অনুকরণ করার মধ্যেই কল্যাণ; আর পরবর্তীদের নবপ্রচলনের মধ্যেই অকল্যাণ।
কাযী ইয়ায (রহঃ) বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসার আলামত শীর্ষক অধ্যায়ে বলেন: “যে ব্যক্তি কাউকে ভালবাসে সে তাকে অগ্রাধিকার দেয়। তার সাথে সাদৃশ্য অর্জনকে প্রাধান্য দেয়। তা না হলে সে ভালবাসা সত্য নয়; বরং নিছক দাবিমাত্র। যে ব্যক্তি সত্যিই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসে এর আলামত তার মধ্যে দেখা যেতে হবে।
প্রথম আলামত হচ্ছে: সুসময়ে, দুঃসময়ে, কর্মোদ্দীপনা ও অলসতা সর্বাবস্থায় তাঁর অনুকরণ, তাঁর আদর্শের অনুসরণ, তাঁর কথা-কাজ-নির্দেশের অনুগমন, তাঁর নিষেধগুলো পরিহার, তাঁর শিষ্টাচারগুলো গ্রহণ। এর প্রমাণ রয়েছে আল্লাহর বাণীতে “বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর; এতে করে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি মার্জনা করে দিবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী, দয়ালু।[সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৩১]
তাঁর শরিয়তকে অগ্রাধিকার দেয়া, আত্মপ্রবৃত্তি ও নিজ-মতের পরিবর্তে তাঁর শরিয়তের অনুসরণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: “যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে মদীনায় বসবাস করেছিল এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তজ্জন্যে তারা অন্তরে ঈর্ষা পোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে অগ্রাধিকার দান করে।” [সূরা হাশর, আয়াত: ৯]
আল্লাহর রেজামন্দি হাছিলের জন্য বান্দাকে নারাজ করা:
যে ব্যক্তি এসব গুণে গুণান্বিত সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে পূর্ণ ভালবাসে। যে ব্যক্তি এসব ক্ষেত্রে কিঞ্চিত ঘাটতি করে তার ভালবাসাতে ঘাটতি আছে; তবে সেও তাঁদেরকে ভালবাসে। [আস-শিফা বি তারিফি হুকুকিল মুস্তাফা (২/২৪-২৫)]
৪. আমরা যদি নবীর মিলাদ বা জন্মতারিখ নিয়ে পর্যালোচনা আসি- এ সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো সাব্যস্ত কিনা? বিপরীত দিকে তাঁর মৃত্যু তারিখ নিয়েও পর্যালোচনা করি এ তারিখ সাব্যস্ত কিনা? নিঃসন্দেহে প্রত্যেক বিবেকবান ও ন্যায়বান ব্যক্তির উত্তর হবে- নবীর জন্মতারিখ সাব্যস্ত হয়নি। কিন্তু নবীর মৃত্যুতারিখ সুনিশ্চিতভাবে সাব্যস্ত হয়েছে। আল্লাহ তার প্রতি শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন। যদি আমরা সিরাত গ্রন্থগুলো পর্যালোচনা করি তাহলে দেখব সিরাত লেখকগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মতারিখের ব্যাপারে একাধিক অভিমত ব্যক্ত করেছেন:
১. সোমবার ২ রা, রবিউল আউয়াল।
২. ৮ই, রবিউল আউয়াল।
৩. ১০ই, রবিউল আউয়াল।
৪. ১২ই. রবিউল আউয়াল।
৫. যুবায়ের ইবনে বাক্কার বলেন: তিনি রমজান মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন।
যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মতারিখ জানার উপর দ্বীনের কোন কিছু নির্ভর করত তাহলে সাহাবায়ে কেরাম অবশ্যই তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেন অথবা তিনি নিজেই তাদেরকে এ ব্যাপারে অবহিত করতেন। অথচ এর কোনটি ঘটেনি।
পক্ষান্তরে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লামের মৃত্যু তারিখের ব্যাপারে কোন মতভেদ হয়নি। তাঁর মৃত্যু তারিখ হিজরী ১১ সালের ১২ই রবিউল আউয়াল।
এরপর আমরা যদি দেখি এ বিদআতপন্থী লোকগুলো কখন মিলাদুন্নবী (নবীর জন্মবার্ষিকী) পালন করে? তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীর দিন।
উবাইদি সম্প্রদায় (যারা বংশ পরিচয়ে জালিয়াতি করে নিজেদেরকে ফাতেমা রাঃ এর সাথে সম্পৃক্ত করে ফাতেমী দাবী করে) এভাবে এ কর্মের প্রচলন করে গেছেন এবং লোকেরা নির্বোধের মত এটাকে গ্রহণ করে নিয়েছে। অথচ তারা ছিল জিন্দিক, নাস্তিক বা ধর্মত্যাগী সম্প্রদায়। তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুতে ফুর্তি করার জন্য এমন একটি উপলক্ষের উদ্ভব করেছে। এর জন্য তারা জমায়েত হত এবং খুশি প্রকাশ করত। আর নির্বোধ মুসলমানদেরকে এভাবে ধোকা দিত যে, তাদের অনুকরণে এ অনুষ্ঠান করার মানে- নবীর প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করা। এভাবে তারা তাদের নিকৃষ্ট ও মন্দ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ও ভালবাসার অর্থকে বিকৃত করণে সফল হল। তাদের কাছে নবীর ভালবাসা হচ্ছে- মিলাদের কাসিদা পড়া, সিরনি ও মিষ্টি বিতরণ, নাচের আয়োজন, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, ঢোল বাজানো, বেপর্দাপনা, পাপাচার, বিভিন্ন বিদআতী দুআ ও শিরকী কথাবার্তা, যেগুলো মিলাদের মজলিসে বলা হয়ে থাকে।
এ বিদআতের কদর্যতা এ ওয়েব সাইটের 10070, 13810 ও 70317 নং প্রশ্নোত্তরে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
এ বিদআতের অপনোদনমূলক আলোচনা জানতে এই লিংকে গিয়ে শাইখ সালেহ আল-ফাউযানের “হুকমুল ইহতিফাল বিল মাউলিদিন্নাবি” নামক বইটি পড়া যেতে পারে।
তিন:
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণের উপর ধৈর্য ধারণ করুন। তাঁর বিরুদ্ধাচারণকারীদের সংখ্যাধিক্য দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। আমরা আপনাকে ইলমে দ্বীন অর্জন ও মানুষের উপকার করার পরামর্শ দিচ্ছি। এ ধরণের ইস্যু যেন পরিবারের সদস্যদের থেকে আপনাকে বিচ্ছিন্ন করে না রাখে। কারণ তারা এমন লোকদের তাকলিদ করছেন যারা মিলাদের জলসাগুলো জায়েয হওয়ার, এমনকি মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে ফতোয়া দেয়। তাই এ বিদআতের বিরোধিতা করার সময় তাদের সাথে কোমল হওয়া উচিত। কথা, কাজ ও আখলাকের সৌন্দর্যতা ফুটিয়ে তুলতে সচেষ্ট থাকা উচিত। নবীর অনুসরণের প্রভাব আপনি আপনার আচার-আচরণ, ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে তাদের কাছে ফুটিয়ে তুলুন। আমরা আপনার জন্য আল্লাহর কাছে তাওফিকের দুআ করছি।
আল্লাহই ভাল জানেন।
সংগ্রহ করা হয়েছে এখান থেকে ক্লিক করুন । : Islam Question and Answer
আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।
এক:
প্রিয় ভাই, আপনি এ বিদআতটি পরিহার করে উত্তম কাজটি করেছেন যে বিদআতটি অভ্যাসের মত মানুষের মাঝে বিস্তার লাভ করেছে। যারা আপনাকে নবীর অনুসরণের ঘাটতি উল্লেখ করে অপবাদ দিল অথবা ইসলামী আদর্শের উপর আপনার অবিচলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলল আপনি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করার দরকার নেই। এমন কোন রাসূল নেই যাঁর সাথে লোকেরা তিরস্কার করেনি বা তাঁর বিবেক-বুদ্ধি ও দ্বীনদারির উপর অপবাদ দেয়নি। আল্লাহ তাআলা বলেন: “এমনিভাবে, তাদের পূর্ববর্তীদের কাছে যখনই কোন রাসূল আগমন করেছে, তারা বলেছে যাদুকর কিংবা উন্মাদ।”[সূরা যারিয়াত, আয়াত: ৫২] নবীদের জীবনে আপনার জন্য উত্তম আদর্শ। সুতরাং আপনি যে কষ্ট পাচ্ছেন এতে ধৈর্য ধারণ করুন এবং আল্লাহর কাছে সওয়াবের প্রত্যাশা করুন।
দুই:
আপনার জন্য নসিহত হচ্ছে- আপনি তাদের সাথে কোন আলোচনা-পর্যালোচনা, তর্ক-বিতর্ক এড়িয়ে চলবেন। যদি এদের মধ্যে জাগ্রত বিবেকের কেউ থাকে যে কথা শুনে ও বুঝতে চেষ্টা করে তাহলে তার সাথে আলোচনা করতে পারেন। বাছাই করে এ ধরণের ব্যক্তিদেরকে আপনি মিলাদের স্বরূপ, এর হুকুম, এটি সঠিক না হওয়ার দলিল জানাতে পারেন। তাদের কাছে আপনি নবীকে অনুসরণ করার মর্যাদা ও বিদআত প্রচলন করার খারাপ দিকটি তুলে ধরতে পারেন। যদি আপনি এমন কাউকে দেখেন তাহলে তাদের সাথে নিম্নোক্ত পন্থায় সংলাপ করতে পারেন এবং তাদেরকে নসিহত করতে পারেন।
১. তারা যেখানে শেষ করেছে আমরা সেখান থেকে শুরু করব। তারা আপনাকে বলেছে: আপনার ইসলাম নতুন ইসলাম। আমরা বলব: কোনটা আগে শুরু হয়েছে- মিলাদ করা; নাকি মিলাদ না করা? নিঃসন্দেহে প্রত্যেক ন্যায়বান ও বিবেকবান ব্যক্তির উত্তর হবে: যারা মিলাদ পালন করে না তারাই আগে। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন এবং তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম উবাইদি যুগ পর্যন্ত মিলাদ করেনি। উবাইদিদের পর মিলাদ করা শুরু হয়েছে। সুতরাং কার ইসলাম নতুন?!
২. আমরা যদি দেখি- কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বেশি ভালবাসে? সাহাবায়ে কেরাম; নাকি তাদের পরবর্তী যামানার লোকেরা? নিঃসন্দেহে প্রত্যেক বিবেকবান লোকের জবাব হবে: সাহাবায়ে কেরাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বেশি ভালবেসেছে এবং বেশি সম্মান দিয়েছে। তারা কি মিলাদ পালন করেছেন?! মিলাদপালনকারী এ লোকদের পক্ষে কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসার ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামের সাথে পাল্লা দেয়া সম্ভব?!
৩. আমরা যদি প্রশ্ন তুলি: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসার অর্থ কী? প্রত্যেক বিবেকবান ও ন্যায়বান ব্যক্তির মতে, নবীর আদর্শের অনুসরণ ও তাঁর প্রদর্শিত পথে চলা। যদি মিলাদপালনকারী এ লোকগুলো তাদের নবীর আদর্শ আঁকড়ে ধরত এবং তাঁকে অনুকরণ করে পথ চলত তাহলে রাসূলের প্রেমিক সাহাবায়ে কেরাম ও নবীর অনুসারীগণ যা করেছেন এদের জন্যেও তা তা করা-ই যথেষ্ট হত এবং তারা বুঝতে পারত যে, পূর্ববর্তীদের অনুকরণ করার মধ্যেই কল্যাণ; আর পরবর্তীদের নবপ্রচলনের মধ্যেই অকল্যাণ।
কাযী ইয়ায (রহঃ) বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসার আলামত শীর্ষক অধ্যায়ে বলেন: “যে ব্যক্তি কাউকে ভালবাসে সে তাকে অগ্রাধিকার দেয়। তার সাথে সাদৃশ্য অর্জনকে প্রাধান্য দেয়। তা না হলে সে ভালবাসা সত্য নয়; বরং নিছক দাবিমাত্র। যে ব্যক্তি সত্যিই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসে এর আলামত তার মধ্যে দেখা যেতে হবে।
প্রথম আলামত হচ্ছে: সুসময়ে, দুঃসময়ে, কর্মোদ্দীপনা ও অলসতা সর্বাবস্থায় তাঁর অনুকরণ, তাঁর আদর্শের অনুসরণ, তাঁর কথা-কাজ-নির্দেশের অনুগমন, তাঁর নিষেধগুলো পরিহার, তাঁর শিষ্টাচারগুলো গ্রহণ। এর প্রমাণ রয়েছে আল্লাহর বাণীতে “বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর; এতে করে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি মার্জনা করে দিবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী, দয়ালু।[সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৩১]
তাঁর শরিয়তকে অগ্রাধিকার দেয়া, আত্মপ্রবৃত্তি ও নিজ-মতের পরিবর্তে তাঁর শরিয়তের অনুসরণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: “যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে মদীনায় বসবাস করেছিল এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তজ্জন্যে তারা অন্তরে ঈর্ষা পোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে অগ্রাধিকার দান করে।” [সূরা হাশর, আয়াত: ৯]
আল্লাহর রেজামন্দি হাছিলের জন্য বান্দাকে নারাজ করা:
যে ব্যক্তি এসব গুণে গুণান্বিত সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে পূর্ণ ভালবাসে। যে ব্যক্তি এসব ক্ষেত্রে কিঞ্চিত ঘাটতি করে তার ভালবাসাতে ঘাটতি আছে; তবে সেও তাঁদেরকে ভালবাসে। [আস-শিফা বি তারিফি হুকুকিল মুস্তাফা (২/২৪-২৫)]
৪. আমরা যদি নবীর মিলাদ বা জন্মতারিখ নিয়ে পর্যালোচনা আসি- এ সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো সাব্যস্ত কিনা? বিপরীত দিকে তাঁর মৃত্যু তারিখ নিয়েও পর্যালোচনা করি এ তারিখ সাব্যস্ত কিনা? নিঃসন্দেহে প্রত্যেক বিবেকবান ও ন্যায়বান ব্যক্তির উত্তর হবে- নবীর জন্মতারিখ সাব্যস্ত হয়নি। কিন্তু নবীর মৃত্যুতারিখ সুনিশ্চিতভাবে সাব্যস্ত হয়েছে। আল্লাহ তার প্রতি শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন। যদি আমরা সিরাত গ্রন্থগুলো পর্যালোচনা করি তাহলে দেখব সিরাত লেখকগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মতারিখের ব্যাপারে একাধিক অভিমত ব্যক্ত করেছেন:
১. সোমবার ২ রা, রবিউল আউয়াল।
২. ৮ই, রবিউল আউয়াল।
৩. ১০ই, রবিউল আউয়াল।
৪. ১২ই. রবিউল আউয়াল।
৫. যুবায়ের ইবনে বাক্কার বলেন: তিনি রমজান মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন।
যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মতারিখ জানার উপর দ্বীনের কোন কিছু নির্ভর করত তাহলে সাহাবায়ে কেরাম অবশ্যই তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেন অথবা তিনি নিজেই তাদেরকে এ ব্যাপারে অবহিত করতেন। অথচ এর কোনটি ঘটেনি।
পক্ষান্তরে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লামের মৃত্যু তারিখের ব্যাপারে কোন মতভেদ হয়নি। তাঁর মৃত্যু তারিখ হিজরী ১১ সালের ১২ই রবিউল আউয়াল।
এরপর আমরা যদি দেখি এ বিদআতপন্থী লোকগুলো কখন মিলাদুন্নবী (নবীর জন্মবার্ষিকী) পালন করে? তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীর দিন।
উবাইদি সম্প্রদায় (যারা বংশ পরিচয়ে জালিয়াতি করে নিজেদেরকে ফাতেমা রাঃ এর সাথে সম্পৃক্ত করে ফাতেমী দাবী করে) এভাবে এ কর্মের প্রচলন করে গেছেন এবং লোকেরা নির্বোধের মত এটাকে গ্রহণ করে নিয়েছে। অথচ তারা ছিল জিন্দিক, নাস্তিক বা ধর্মত্যাগী সম্প্রদায়। তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুতে ফুর্তি করার জন্য এমন একটি উপলক্ষের উদ্ভব করেছে। এর জন্য তারা জমায়েত হত এবং খুশি প্রকাশ করত। আর নির্বোধ মুসলমানদেরকে এভাবে ধোকা দিত যে, তাদের অনুকরণে এ অনুষ্ঠান করার মানে- নবীর প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করা। এভাবে তারা তাদের নিকৃষ্ট ও মন্দ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ও ভালবাসার অর্থকে বিকৃত করণে সফল হল। তাদের কাছে নবীর ভালবাসা হচ্ছে- মিলাদের কাসিদা পড়া, সিরনি ও মিষ্টি বিতরণ, নাচের আয়োজন, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, ঢোল বাজানো, বেপর্দাপনা, পাপাচার, বিভিন্ন বিদআতী দুআ ও শিরকী কথাবার্তা, যেগুলো মিলাদের মজলিসে বলা হয়ে থাকে।
এ বিদআতের কদর্যতা এ ওয়েব সাইটের 10070, 13810 ও 70317 নং প্রশ্নোত্তরে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
এ বিদআতের অপনোদনমূলক আলোচনা জানতে এই লিংকে গিয়ে শাইখ সালেহ আল-ফাউযানের “হুকমুল ইহতিফাল বিল মাউলিদিন্নাবি” নামক বইটি পড়া যেতে পারে।
তিন:
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণের উপর ধৈর্য ধারণ করুন। তাঁর বিরুদ্ধাচারণকারীদের সংখ্যাধিক্য দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। আমরা আপনাকে ইলমে দ্বীন অর্জন ও মানুষের উপকার করার পরামর্শ দিচ্ছি। এ ধরণের ইস্যু যেন পরিবারের সদস্যদের থেকে আপনাকে বিচ্ছিন্ন করে না রাখে। কারণ তারা এমন লোকদের তাকলিদ করছেন যারা মিলাদের জলসাগুলো জায়েয হওয়ার, এমনকি মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে ফতোয়া দেয়। তাই এ বিদআতের বিরোধিতা করার সময় তাদের সাথে কোমল হওয়া উচিত। কথা, কাজ ও আখলাকের সৌন্দর্যতা ফুটিয়ে তুলতে সচেষ্ট থাকা উচিত। নবীর অনুসরণের প্রভাব আপনি আপনার আচার-আচরণ, ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে তাদের কাছে ফুটিয়ে তুলুন। আমরা আপনার জন্য আল্লাহর কাছে তাওফিকের দুআ করছি।
আল্লাহই ভাল জানেন।
সংগ্রহ করা হয়েছে এখান থেকে ক্লিক করুন । : Islam Question and Answer