Probondo

Kitab


অমুসলিম মাত্রই কি কাফির ?


প্রশ্ন: শেইখ, বর্তমান সময়ে কিছু স্কলারকে আমি বলতে শুনেছি যে তারা বলেন – ‘কাফির’ হলো শুধুমাত্র তারাই যারা ইসলামের সত্যতা সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার পরও তার বিরোধিতা করেছে। যাদেরকে দাওয়াহ দেওয়া হয়নি, যারা ইসলাম সম্পর্কে নিশ্চিত জ্ঞান পায়নি, তারা অমুসলিম, কিন্তু ‘কাফির’ নয় – এ সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
(প্রশ্নটি আমি শেইখ ইয়াসির কাযিকে তাঁর ২০১৬ সালের  গ্রীষ্মে টরন্টোতে নেওয়া ‘নো ডাউট’ সেমিনারে জিজ্ঞেস করেছিলাম।)
শেইখ ইয়াসির কাযি: ইসলামের প্রথম থেকেই অমুসলিমদেরকে কাফির বলা হতো। ইসলামে মানুষ দুই প্রকার – মুসলিম ও কাফির – এর মাঝামাঝি কিছু নেই। আমরা যদি কুরআন ও সুন্নাহর দিকে তাকাই তাহলে দেখব যে, আমাদের শরিয়ার সকল বিধিবিধানে হয় মুসলিমের কথা বলা হয়েছে, নতুবা কাফিরের কথা বলা হয়েছে, মাঝামাঝি কোনো টাইপের কথা বলা হয়নি।
তুমি যে মাঝামাঝি টাইপের কথা বলছ এদের জন্য বিভিন্ন লেনদেনের বিধান কী হবে? আমরা জানি যে, মুসলিম সন্তান কাফির পিতার সম্পদের উত্তরাধিকারী হতে পারে না, কিন্তু কাফির সন্তান উত্তরাধিকারী হতে পারে। তাহলে আমাকে বলো, মাঝের টাইপের জন্য এর বিধান কী হবে? আবার, মুসলিম শুধু মুসলিমকে বিয়ে করতে পারে, কাফিরকে বিয়ে করতে পারে না (আহলে কিতাবের ব্যতিক্রম ছাড়া)। তাহলে এই মাঝের ক্যাটাগরির জন্য বিধান কী হবে? বিয়ে করা যাবে? নাকি, যাবে না? কারণ, তোমার প্রস্তাব মতে এরা মুসলিমও নয়, আবার কাফিরও নয়! কাজেই, আমাদের শরিয়ায় মুসলিম ও কাফির বাদে তৃতীয় প্রকার ধার্মিক নিয়ে আসার কোনো অবকাশ নেই।
আসলে অমুসলিমদেরকে কাফির না বলার প্রবণতা শুরু হয়েছে ‘কাফির’ শব্দটির কালচারাল ব্যবহার থেকে। ইসলামের প্রথম থেকেই ‘কাফির’ বলতে সব ধরনের অমুসলিমদেরকেই বুঝানো হয়েছে। কিন্তু, সময়ের পরিক্রমায় ও কালচারাল প্রভাবে ‘কাফির’ শব্দটির সাথে বিভিন্ন নেতিবাচক দোষ (যেমন – মিথ্যা কথা বলা, যুলুম করা ইত্যাদি) জুড়ে গেছে। ফলে, কাফির বলতেই আমরা মানবিক স্কেলে খারাপ মানুষদেরকে বুঝতে শুরু করেছি। কিন্তু, এই বুঝের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। কুরআন ও সুন্নাহতে কাফির হলো অমুসলিম। এখন তার মধ্যে অন্য ভালো গুণাবলী থাকলেও সে কাফির, না থাকলেও সে কাফির। তাকে দাওয়াহ দেওয়া হলেও সে কাফির, না দেওয়া হলেও সে কাফির। সকল শার’ঈ বিধানের ক্ষেত্রে আমরা তাকে কাফির হিসাবে বিবেচনা করব।
পাশাপাশি, একথাটিও মনে রাখতে হবে যে, গালাগালি করার উদ্দেশ্যে আমরা কাউকে’কাফির’ বলে ডাকব না। আর এটাও মনে রাখতে হবে যে, কোনো কাফির ব্যক্তি দোজখে যাবে না বেহেশতে যাবে তা নিয়েও আমরা কোনো মন্তব্য করব না। আমরা বলব – সাধারণভাবে, কাফিররা দোজখে যাবে। কিন্তু, একজন নির্দিষ্ট কাফির (যেমন – মাদার তেরেসা বা আইজাক নিউটন) দোজখে তখনই যাবে যখন সে ইসলাম সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণ জানার পরেও তা গ্রহণ করেনি। আর এই চুড়ান্ত বিচার শুধু আল্লাহই করতে পারেন।