Probondo

Kitab


মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী এর সংক্ষীপ্ত জীবনী।

ওলামামুহাদ্দিস
মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী
Muhammad Naasiruddeen al-Albani
محمد ناصر الدين الألباني
জন্ম১৯১৪
এশকোদরাহ, আলবেনিয়া
মৃত্যু২ অক্টোবর, ১৯৯৯ (৮৫ বছর বয়স)
আম্মানজর্ডান
জাতীয়তাআলবেনিয়া, পরে সিরিয়া
জাতিভুক্তআলবেনীয়
পেশাইতিহাসবিদ, মুহাদ্দিস
সম্প্রদায়সুন্নি
শাখাআছারী
আন্দোলনসালাফি
মূল আগ্রহহাদীস গবেষনা
ওয়েবসাইটআলবানী'র ওয়েবসাইট
মুহাম্মদ নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী ছিলেন বিংশ শতাব্দীর একজন আলবেনীয় ইসলামী চিন্তাবিদ, যিনি হাদীস ও ফিকহ শাস্ত্রের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি পেশাগতভাবে একজন ঘড়ি মেরামতকারী ছিলেন এবং এর পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন প্রামাণ্য লেখক ও বক্তা। 

নাম: মুহাম্মদ নাসিরুদ্দিন (১৯১৪-১৯৯৯খৃষ্টাব্দ)।
ডাক নাম: আবু আবদুর রহমান।
ইউরোপের মুসলিম অধ্যুষিত দেশ আলবেনিয়ায় তার জন্ম হওয়ায় তাকে আলবানী বলা হয়।
পুরো নাম: আল্লামা মুহাম্মদ নাসিরুদ্দিন আলবানী।
পিতা: আলহাজ্ব নূহ।
দাদা: নাজাতী।
প্রবল ইচ্ছাশক্তি, অসীম সাহস, সূদৃঢ় মনোবল আর ইখলাস ভরা প্রত্যয় থাকলে কিভাবে একজন মানুষকে আল্লাহু তা'য়ালা সাধারন ঘড়ির মেকার থেকে শতাব্দির শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদে পরিনত করে তার জলন্ত উদাহরন হচ্ছেন আল্লামা মহাম্মদ নাসিরুদ্দিন আলবানী।
[ আন্তর্জাতিক বাদশাহ ফায়সাল পুরষ্কার:
ইসলামী জ্ঞান-গবেষণা ও ইসলামী শিক্ষার প্রচারে অবদানের জন্য তাকে ১৪১৯ হিজরী মোতাবেক ১৯৯৯ ইং সনে আন্তর্জাতিক বাদশাহ ফায়সাল পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়। তার পুরষ্কারের শিরোনাম ছিল: “প্রায় একশ’র অধিক পুস্তক রচনার মধ্য দিয়ে হাদীসের তাহকীক, তাখরীজ ও গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রে হাদীসের সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য সিরিয় নাগরিক সম্মানিত শাইখ মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানীকে এ পুরষ্কারের জন্য মনোনীত করা হল।
তার বইগুলো সারা বিশ্বে পাওয়া যায়। বাংলাভাষায় তার ৪৪টি বই বাংলায় করা হয়েছে। তারমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বই রাসূল (সা:) এর নামাজ- আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী। দাম:১৩০। এবং নাসিরুদ্দিন আলবানীর জিবনী সম্পর্কে বই পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশে। তাওহীদ পাবলিকেশন্স এবং হাদিস একাডেমিতে।]
তাঁর ব্যাপারে আলেমগণের প্রশংসা:
১) শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহ:) বলেন:
“বর্তমান বিশ্বে আসমানের নিচে আল্লামা মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানীর মত এত বড় হাদীসের আলেম আমি দেখি নি।”
শাইখ বিন বায (রহ:) এর নিকট এই হাদীসটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তায়ালা প্রতি একশ বছরের মাথায় এই উম্মতের জন্য এমন একজনকে পাঠাবেন যিনি দ্বীন-ইসলামকে সংস্কার করবেন।” তিনি বলেন: আমার ধারণা, শাইখ মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী হলেন এ যুগের মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক। আল্লাহ সব চেয়ে ভাল জানেন।
২) আল্লামা শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন (রহ.) বলেন:
“শাইখের সাথে বৈঠকাদীতে বসার পর (যদিও তা কম) যা বুঝতে পেরেছি তা হল: তিনি সন্নাহর প্রতি আমল এবং আমল-আকীদা উভয় ক্ষেত্রেই বিদয়াত উৎখাতে খুবই আগ্রহী। আর তার লিখিত বই-পুস্তক পড়ে তার ব্যাপারে জানতে পারলাম যে, তিনি হাদীসের সনদ ও মতন উভয় ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অধিকারী। এ সকল বই-পুস্তক দ্বারা আল্লাহ তায়ালা অনেক মানুষকে উপকৃত করেছেন-যেভাবে জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে তারা লাভবান হয়েছে তদ্রূপ নীতি নির্ধারণ এবং ইলমে হাদীসের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির ক্ষেত্রেও তারা লাভবান হয়েছেন। এটি মুসলমানদের জন্য বড় একটি বড় প্রাপ্তি। আল হামদুলিল্লাহ। আর ইলমে হাদীসের ক্ষেত্রে তার জ্ঞানগর্ভ গবেষণা সত্যি চমৎকৃত হওয়ার মত।”
৩) খ্যাতনামা মুফাসসির আল্লামা শাইখ মুহাম্মদ আল আমীন আশ শানকীতী:
শাইখ আব্দুল আজীজ আল হাদ্দাহ বলেন: আল্লামা শানকীতী শাইখ আলবানীকে বিষ্ময়করভাবে সম্মান করতেন। তিনি মদীনার মসজিদে হারামে দারস প্রদান করার সময় যদি শাইখ আলবানীকে হেঁটে যেতে দেখতে তিনি তার সম্মানে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং সালাম প্রদান করতেন।
৪) শাইখ মুকবিল আল ওয়াদাঈ:
“আমি যে আকীদা পোষণ করি এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে দ্বীন হিসেবে মনে করি তা হল, শাইখ মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী হলেন সে সকল মুজাদ্দিদগণের অন্তর্ভুক্ত যাদের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদীসটি প্রযোজ্য:
“আল্লাহ তায়ালা প্রতি একশ বছরের মাথায় এই উম্মতের জন্য এমন একজনকে পাঠাবেন যিনি দ্বীন-ইসলামকে সংস্কার করবেন।“
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ. এর অন্তিম ওসিয়ত:
প্রথমত: আমি আমার স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, বন্ধু-বান্ধব ও যারা আমাকে ভালবাসে তাদের নিকট এই ওসিয়ত করছি, যখন তাদের কাছে আমার মৃত্যু সংবাদ পৌছবে তারা যেন আমার জন্য আল্লাহর নিকট রহমত ও মাগফিরাত কামনা করে দুয়া করে এবং আমার মৃত্যুতে কেউ যেন নিয়াহা বা উচ্চ আওয়াজে ক্রন্দন না করে।
দ্বিতীয়ত: যেন অনতি বিলম্বে আমাকে দাফন করা হয় এবং প্রয়োজনীয় কাফন-দাফনের প্রস্তুতির জন্য যাদেরকে না হলেই নয় তাদেরকে ছাড়া নিকটাত্মীয় বা বন্ধু-বান্ধবকে মৃত্যুর সংবাদ দিতে গিয়ে যেন দাফন কর্ম বিলম্ব না করে। আমাকে গোসল দেয়ার দায়িত্ব পালন করবে, ইজ্জত খাযার আবু আব্দুল্লাহ এবং তিনি যাকে এ কাজে সহযোগিতার জন্য পছন্দ করবেন। তিনি আমার প্রতিবেশী এবং একান্ত অন্তরঙ্গ বন্ধু।
তৃতীয়: তিনি মৃত্যুর আগেই তার বাড়ির অদূরেই কবরের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দেন। যেন গাড়িতে উঠিয়ে তার লাশ বহন করে দূরে নিতে না হয় কিংবা কবর দিতে আসা লোকজনকে গাড়িতে চড়ে লাশের সাথে যেতে না হয়। সেই সাথে এমন পুরনো গোরস্থানে যেন তাকে কবর দেয়া হয় যেটার ব্যাপারে আশা করা যায় যে, সেটা আর খুঁড়া-খুঁড়ি করা হবে না।
আমি যদি দেশের বাইরে মারা যাই তবে আমার দাফন কর্ম সমাধান করার আগে যেন দেশে আমার সন্তান সন্তান-সন্ততি বা অন্য লোকজনকে খবর না দেয়া হয়। অন্যথায় তারা আবেগের বশবর্তী হয়ে হয়ত এমন কিছু করবে যার কারণে আমার দাফন কর্ম বিলম্ব হয়ে যাবে।
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা, আমি যেন তার সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করি যে, তিনি মৃত্যুর আগেই আমার পূর্বাপর সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন।
আর আমার লাইব্রেরীর ব্যাপারে ওসিওয়ত হল, লাইব্রেরীর প্রকাশিত, অপ্রকাশিত, পাণ্ডুলিপি, আমার লেখা বা অন্যের লেখা সকল বই-পুস্তক মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়াকফ করছি। যেন কুরআন-সুন্নাহ ও সালফে-সালেহীনের মানহাজের দিকে দাওয়াতের পথে এগুলো স্মৃতি হিসেবে অবশিষ্ট থেকে যায়। কারণ, আমি এক কালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলাম। আল্লাহর নিকট আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক থাকা অবস্থায় তিনি যেভাবে আমার মাধ্যমে ছাত্রদের উপকার করেছেন ঠিক সেই ভাবে আমার লাইব্রেরীতে যে সকল মানুষ জ্ঞানার্জনের জন্য আসবে তারাও যেন এগুলো থেকে উপকৃত হয়। আর আমি নিজেও যেন তাদের দুয়ার মাধ্যমে লাভবান হই।
ﺭﺏ ﺃﻭﺯﻋﻨﻲ ﺃﻥ ﺃﺷﻜﺮ ﻧﻌﻤﺘﻚ ﺍﻟﺘﻲ ﺃﻧﻌﻤﺖ ﻋﻠﻲ ﻭ ﻋﻠﻰ ﻭﺍﻟﺪﻱ ﻭ ﺃﻥ ﺃﻋﻤﻞ ﺻﺎﻟﺤﺎً ﺗﺮﺿﺎﻩ ﻭ ﺃﺻﻠﺢ ﻟﻲ ﻓﻲ ﺫﺭﻳﺘﻲ ﺇﻧﻲ ﺗﺒﺖ ﺇﻟﻴﻚ ﻭ ﺇﻧﻲ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ
“হে প্রভু, তুমি আমাকে এবং আমার পিতা-মাতাকে যে নেয়ামত দিয়েছ তার শুকরিয়া আদায়ের তাওফীক দান কর। আরও তাওফীক দান কর এমন নেক আমল করার যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও। আমার উপকারের জন্যে আমার সন্তান-সন্ততিকে পরিশুদ্ধ করে দাও। আমি তোমার নিকট তওবা করলাম। নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।”
২৭ জুমাদাল আওয়াল ১৪১০ হিজরী।
মৃত্যু:
আল্লামা আলবানী রহ. এর ওফাত হয়, শনিবার, ২২ জুমাদাল আখেরা, ১৪২০ হিজরী, মোতাবেক ২ অক্টোবর, ১৯৯৯ খৃষ্টাব্দ। ইশার সালাতের পরে তাকে দাফন দেয়া হয়। দুটি কারণে শাইখের দাফন তাড়াতাড়ি দেয়া হয়:
প্রথমত: তার ওসীয়ত বাস্তবায়ন।
দ্বিতীয়ত: শাইখের মৃত্যুর সময়কালটা ছিল খুব গরম। তাই যেন দাফন দিতে আসা লোকজনের কষ্ট না হয়ে যায় ।
যদিও শাইখের মৃত্যুর সংবাদ নিকটাত্মীয় ও কাফন-দাফনে সহযোগিতা করার জন্য বিশেষ কিছু লোককে ছাড়া অন্য কাউকে দেয়া হয় নি এবং মৃত্যু বরণের পর দাফন করতে তেমন বিলম্বও করা হয় নি তথাপি তারা জানাজায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। কারণ, যে ব্যক্তিই তার মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছে সেই অন্য ভাইকে এই খবর পৌঁছিয়ে দিয়েছে।
আমরা দুয়া করি, ইলমে হাদীসের এই মহান খাদেমকে আল্লাহ তায়ালা যেন মুসলিম জাতির পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করেন। আমীন।